micro-story-meyebela

মেয়েবেলা
সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

রাঙ্গাকাকা তোমার সব ভাইপো-ভাইঝিদের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে ফেভারিট। আমি সাহিত্য ভালোবাসতাম বলে তুমি আমাকে সময় পেলেই অনেক কিছু পড়াতে। বার বার বলতে সাহিত্য-বোধ না জাগলে জীবনটা ধরা -ছোঁয়ার আড়ালে চলে যায়, রে টুলি। আমার এগারো বছর বয়সে হ্যামলেট পড়ে শুনিয়েছিলে। আর শুনিয়েছিলে শরৎচন্দ্রের চরিত্রহীন গল্পটা।

বাবা কে যখন বললাম, বাবা বলল, “কত ভালো ভালো গল্প আছে এ সব কেন তোর রাঙ্গাকাকা তোকে পড়িয়ে শোনায়। তুই এখন অনেক ছোট। ছোটদের কি সুন্দর সুন্দর গল্প আছে।”

তোমার আজ মনে নেই, তাই না রাঙ্গাকাকা? আমার কিন্তু সব পুরোপুরি মনে আছে। জানো। কিছু কিছু ঘটনা কোনও বিশেষ কারণে মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে যায়। সেই রকম একটা ঘটনা আমার পক্ষে সারা জীবনেও ভোলা সম্ভব নয়। তুমি আজ এই জগতে থাকলে হয়ত তোমারও মনে পড়ত।

একদিন রাত্রে তেমন জ্যোৎস্না ছিল না। কাঠচাঁপা গাছটার জন্য কেমন একটু অন্ধকার অন্ধকার মতো। মেঘলা আকাশে চাঁদ ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। ঝির ঝির করে হাওয়া বইছিল।

বারান্দায় আমি দুলছিলাম একটা দোলনায়। তুমি বারান্দার রেলিং-এর কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলে। বারান্দার অন্যপাশে টুকুদি, বিন্তি, পিকাই, ঠামা, মা বসে গল্প করছিল।

একসময় তুমি হঠাৎ আমার কাছে এসে বললে, “তোকে আরো একটু জোরে দুলিয়ে দেব, টুলি?”

আমি বললাম, “ন্না! না। আমার আস্তে দুলতেই ভালো লাগে।”

হঠাৎ আমি কেন যে ছেলেমানুষি করে ফেলেছিলাম, এখন তাই ভাবি। বলেছিলাম, “রাঙ্গাকাকা, আজ তোমার সিগারেটটা একটু দেবে? খেয়ে দেখব কেমন খেতে? তুমি খুব জোরসে বকুনি দিলে।”

–কি? সিগারেট খাবি তুই? মেয়েরা কি সিগারেট খায় রে?

— দাও না গো রাঙ্গাকাকা। কেউ দেখতে পারবে না। খেয়ে দেখি না কেমন খেতে? বায়না ধরলাম।

–খাবি বলছিস যখন তাহলে আগে আমি তোর মুখে একটু গন্ধ করে দি। বলেই দোলনাটা থামিয়ে দিয়ে তুমি সামনের দিক থেকে এসে আমাকে দাঁড় করালে। আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার সিগারেটের গন্ধমাখা মুখটা …না না রাঙ্গাকাকা আমি মুখে আনতে পারছি না সে কথা। তবে আমার জীবনে সেই প্রথম। ছুটে মা ঠাম্মাদের কাছে গিয়ে বসেছিলাম। কাউকে মুখ ফুটে কিচ্ছু বলতে পারি নি। কি একটা লজ্জা-ঘৃণা চেপে ধরেছিল। তখন আমি ঠিক বারো বছর, সাত মাস, নয় দিন। তারিখটাও মনে আছে কেমন দেখো- চোদ্দ-ই ফেব্রুয়ারি। তারপর তোমার সাথে আর ভালো করে কথা বলতে পারি নি। এড়িয়ে চলতাম।

সেদিন অমন সুন্দর একটা পরিবেশে আমি কিন্তু তোমার কাছ থেকে ওই মূহুর্ত-টা চাই নি রাঙ্গাকাকা। তবে সেদিন থেকেই আমি ছোট্ট মেয়ে থেকে লাফিয়ে বড় মেয়ে হয়ে গেছিলাম।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *