poem-nivriti

নিভৃতি
সৈকত মুখোপাধ্যায়

শোকেরও কখনো একটু নিভৃতির প্রয়োজন হয়–
যেখানে সে ইচ্ছে করলে কাঁদতে পারে।
যেখানে তার অস্ফুট আত্মপক্ষ সমর্থন ও
মর্মবেদনা কারুর কানে পৌঁছয় না।

তুমি যদি তাকে কোনো বসন্তের বনবাংলোর সুগন্ধী নির্জনতা দিতে নাও পারো,
তাকে দিও সন্ধ্যালীন ছাদের আলিসা।
সন্ধ্যামণি ফুলের মতই যেখানে অস্পষ্ট হয়ে ফুটে থাকবে শোকের থমথমে মুখ।
তখন এমনকি পাশের বাড়ির গৃহিনীটিও তাকে চিনতে না পেরে চলে যাবে।

যদি সে সুযোগও না থাকে,
তুমি তাকে ত্বরাহীন একখানি স্নানঘর দিও।
স্নানঘরও মন্দ নয়, সকলেই জানে।
সেখানে অবিরাম জলের শব্দ অনায়াসেই ঢেকে দিতে পারে
হঠাৎ দমক দিয়ে উঠে-আসা কিছু অনুতাপ।
জলবাষ্পে ঝাপসা আয়না ঢেকে দিতে পারে
তার মুখশ্রীর যাবতীয় ভাঙচুর।
আর সর্বোপরি, শোক তার চোখ ধুয়ে
আবার উৎসব-বাড়ির খুশির আবহে হাসতে-হাসতে মিশে যেতে পারে।

কিন্তু সেই সুযোগটুকুও যদি না পাও,
যদি কোনো অবিবেচিকা বোন বা বৌদি ক্রমাগত দরজায় ধাক্কা দিয়ে যায়
আর তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে হয়,
আর এভাবেই যদি চোখের পলকে বেলা চলে যায়, গোধুলি-লগ্নও চলে আসে,
তুমি যদি একবার মুখ তুলে দ্যাখো বহু হাস্যময় মানুষের ভিড়ে
শুধু একজনই দূর থেকে তোমাকে দেখেই চলে গেল

মুখেও কি দিল কিছু? মনে তো হল না।
শুধু যাবার আগে তোমার দাদার হাতে দিয়ে গেল তুচ্ছ উপহার।
রঙিন কাগজে মোড়া থাকলেও তুমি জানো,
রুমির কবিতা ছাড়া ওটা আর অন্য কিছু হতেই পারে না,
কারণ, তুমিই তাকে অনেকদিন আগে বলেছিলে, আমাকে পড়িও,
আর এইসবের মধ্যে যদি সহসাই জোড়া জোড়া শঙ্খ বেজে ওঠে
আর উলুধ্বনি,
যদি দ্যাখো শোকের নিভৃতি তুমি কিছুতেই দিতে পারছ না–

তখন শোককে তুমি দিয়ে যেও তোমার আনতমুখ…
দুচোখের আমন মরসুম…
দুটি তুচ্ছ পানপাতার অনন্ত আড়াল।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *