binodan-smritir-studiopara-part-1

স্মৃতির স্টুডিওপাড়া – পর্ব ১
স্টুডিওপাড়া
প্রিয়ব্রত দত্ত


Picture courtesy : Youtube

‘আমি দেবাংশু সেনগুপ্ত’

বৈশাখ মাস। ভরদুপুর। ঠা ঠা রোদ। গ্রীষ্মের গনগনে আঁচে ঝিম মেরে আছে এনটিওয়ান স্টুডিও চত্বর। স্টুডিওতে ঢোকার মুখে বাঁদিকের অফিস ঘরে গলদঘর্ম প্রদ্যুত আমার মুখের দিকে একবার অবাক চোখে তাকাল। ততদিনে এনটিওয়ান-এর অফিস কর্মীদের সঙ্গে আমার র‍্যাপো তৈরি হয়ে গেছে। কী ব্যাপার? কোথা থেকে আসছি? কার সঙ্গে দেখা করব বা অ্যাপয়েনমেন্ট করা আছে কিনা – ইত্যাদি-প্রভৃতি ঝক্কিগুলো আর পোয়াতে হয় না। মানে কৈফিয়ৎ দিতে হয় না। শুধু জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মহাপ্রভুর শ্যুটিংটা কোথায় হচ্ছে গো?’ ‘তিন নম্বরে’, বলে প্রদ্যুত ভিজে তোয়ালেটা মুখে চাপা দিয়ে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিল।

১৯৯৯ সাল। মে মাস। সীমান্তে কার্গিল সেক্টারে শুরু হয়েছে জোর লড়াই। ভারত-পাকিস্তানের দ্বিতীয় ‘পাণিপথ’। দেশ তথা গোটা বিশ্ব রূদ্ধশ্বাস প্রহর গুণছে। খবরের কাগজ তো আছেই, ততদিনে টিভি’তে যুদ্ধের ‘লাইভ কভারেজ’ দেখতে শিখে গিয়েছে ড্রইমরুম বিলাসীরা। সংসদ থেকে সন্টুদার চায়ের দোকান, সর্বত্র চলছে মহারণ নিয়ে মাতব্বরি। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে সেদিনের যুদ্ধ বিদ্ধস্ত কার্গিলের সঙ্গে কল্লোলিনী কলকাতার কোনও যোগসূত্র ছিল না। তাছাড়া তখন এমন কোনও ক্ষেপনাস্ত্রের আবির্ভাব ঘটেনি যে দ্রাস সেক্টারের ওপার থেকে মিশাইল ছুঁড়লে দড়াম করে কলকাতায় এসে আছড়ে পড়বে। একমাত্র সীমান্তে যুদ্ধরত বাঙালি বেপরোয়াদের নিয়েই যা উদ্বেগ উথলে উঠত কফির কাপে আর সিগারেটের ধোঁয়ায়।

যুদ্ধ মানে ঐতিহাসিকভাবে কারোর পৌষমাস, কারোর সর্বনাশ। সেই সর্বনাশের একটা সূক্ষ্ম স্রোত আম বাঙালির অজান্তে অলি-গলি বেয়ে সটান ঢুকে পড়েছিল স্টুডিও পাড়ায়। তখন টেলি সিরিয়ালের যাবতীয় শট অর্থাৎ শব্দ সহ ছবি রেকর্ড করা হত ভিএইচএস ক্যাসেটে। আর এই ক্যাসেট আসত সীমান্ত টপকে, ঘুরপথে ধারাবাহিক নির্মাতাদের হাতে। কাগজপত্র ছাড়াই। কারণ অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে বৈধ কাগজপত্র সমেত ক্যাসেট কিনতে গেলে, প্রতিটি ক্যাসেটের যা দাম পড়তো, তাতে সিরিয়ালের একটি এপিসোড তুলতে গেলে ঢাকের দায়ে মনসা বিকিয়ে যাবার যাবার জোগাড় হতো। অগত্যা সিরিয়ালের সেদিনের গৌরী সেনরা ওই চোরাপথে আসা চিনা কিংবা জাপানি ক্যাসেট দিয়েই আস্ত টেলি-ইন্ডাস্ট্রি সচল রাখতেন।

গোলমাল শুরু হলো কার্গিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ভারতের সমস্ত সীমান্ত সীল করে দেওয়া হলো যুদ্ধের কারণে। ব্যস, কি পাহাড়, কি নদী, কি জঙ্গল কিংবা খাড়ি-নাড়ি টপকেও ক্যাসেট আসা বন্ধ। সীমান্ত জুড়ে বিএসএফ-এর কড়া নজরদারি। এদিকে তখন হৈহৈ করে চলছে দেবাংশু সেনগুপ্তর ‘মহাপ্রভু’, বিষ্ণু পালচৌধুরীর ‘কনকাঞ্জলী’র মতো সব মেগা। ওদিকে ক্যাসেটের স্টক ফুরিয়ে আসছে। সিরিয়ালের সিন ব্যাঙ্কিং করা রীতিমতো সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতেও পারছে না। যুদ্ধ কবে থামবে তাও কেউ অনুমান করতে পারছে না। এদিকে বৈধ কাগজপত্রর বিনিময়ে ক্যাসেট কিনে, তাতে শ্যুটিং করতে গিয়ে এপিসোড প্রতি খরচে মাথায় হাত পড়ছে প্রোডিউসারদের।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলা ধারাবাহিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে খবর করতেই সেদিন কাঠফাটা রোদে এনটিওয়ানে পা রাখা। শ্যুটিং চলছে দেবাংশু সেনগুপ্তর হিট সিরিয়াল ‘মহাপ্রভু’র। ফ্লোরে ঢুকলে অবশ্য ওসব সংকট-ফংকট বোঝার উপায় নেই। দরদর করে ঘামতে ঘামতে দুদ্দাড়িয়ে চলছে শ্যুটিং। হ্যাঁ. আজকের মতো টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার কোনও শ্যুটিং ফ্লোরই সেদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল না। এমনকি হাতে গোনা দু-একটা বাদে মেকআপ-রুমগুলোও ছিল কংসের কারাগারের মতো।

শ্যুটিং স্থলে বিরাট বিরাট পেডেস্ট্রাল ফ্যান বসানো থাকত। শট শেষ হলেই সেগুলো বিকট শব্দ করে কৃত্রিম বাতাসের ঝড় তুলত। সেই ঝড়ে শরীর মন শীতল করার প্রাথমিক অধিকার ছিল সংশ্লিষ্ট শিল্পীর। পরিচালকের আশপাশেও একটা পাখা দাঁড় করানো থাকত বটে, কিন্তু সেটা অত ‘ঝড়’ তুলত না কাগজপত্র সব উড়ে যাবার আশঙ্কায়। শিল্পী আর সহকারীরা ছাড়া সেই পাখাগুলোর সামনে দু-দণ্ড ‘হাওয়া খাওয়ার’ কোনও অধিকার ছিল না প্রোডাকশনের কারোর। কোনও প্রোডাকশন বয়ের জন্য যদি চিলতে হাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে কি, তার গেল! ফাল্গুন-চৈত্র থেকে শুরু করে বর্ষা না আসা পর্যন্ত স্টুডিওর শ্যুটিং ফ্লোরগুলো ফার্নেসের মতো তেতেপুড়ে থাকত। গ্রীষ্মের দিনগুলোতে চরিত্র অনুযায়ী মেকআপ নিয়ে, উইগ পরে, শরীরে জমকালো পোশাক চাপিয়ে, কয়েক হাজার ওয়াট আলোর তলার দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অন্তর্দৃশ্যর শ্যুটিং করা তাই একপ্রকার দুঃসহ ব্যাপার ছিল।

বড়-ছোট অনেক অভিনেতাই ছিলেন, যিনি একটু অতিরিক্ত ঘামতেন। তাঁদের নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা হত কস্টিউম বা মেকআপ আর্টিস্টদের। কোনও শট হয়ত তিনবারে ‘ওকে’ হয়েছে। পরবর্তী শট যেটি নেওয়া হবে, তার একই আর্টিস্ট, একই কস্টিউম, কিন্তু অন্য দিনের দৃশ্য। এদিকে অনেকক্ষণ ধরে আগের শট দেওয়ার পর শিল্পী ঘেমে নেয়ে একসা। পরিচালক চিৎকার করছেন, ‘ওরে কে আছিস, ঘাম শুকো। কন্টিনিউটির দফা রফা হবে।’ অগত্যা তখন স্টার শিল্পী হলে দৈত্যের মতো পাখাগুলো তাঁর চারদিকে ফিট করে দেওয়া হত। আর তুলনায় ছোট শিল্পী হলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হতো পাখার সামনে। ছাগল বেঁধে পাহারা দেওয়ার মতো সেই শিল্পীর উপর চোখ রাখা হত কতটা কস্টিউম শুকলো। ওদিকে পরিচালক বলে দিয়েছেন ঠিক সাড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘাম শুকিয়ে পরবর্তী শটের জন্য শিল্পীকে ‘রেডি’ করে দিতে হবে।

শিল্পী শুকোনোর সেই সাবেক দক্ষযজ্ঞে ভয়ঙ্কর শব্দে সমান তালে সঙ্গত করত পাখাগুলো। তাই তখন শট নেবার সময় লাইট-সাউণ্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশান বলার আগে পরিচালক অর্ডার করতেন ‘ফ্যানস অফ’। ফ্লোরের এক অন্ধকার কোণে একটি বিরাট লুপ বোর্ড আর তাতে লাগানো দশ কেজি ওজনের বাটখারার মাপে গোল গোল সুইচ নিয়ে অপেক্ষা করতেন একজন সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান। পরিচালকের নির্দেশ পেয়ে তিনি যখন মেন সুইটটা ঘটাং করে অফ করতেন, তখন মনে হতো কোনও এয়ারবাস ইঞ্জিন বন্ধ করল।

তখন একটা শট সবে শেষ হয়েছে। ক্যামেরা স্থান বদল করবে। ফুল স্পিডে চলছে গোটা পাঁচেক দৈত্যাকার পেডেস্ট্রাল ফ্যান। সেগুলোর দানবিক শব্দে মহাপ্রভুর ফ্লোরে তখন কান পাতা দায়। যন্ত্রচালিত ভূতের মতো আলোকস্তম্ভ, কাটার, ট্রলির রেল ইত্যাদি প্রভৃতি নিয়ে চলছে ছুটোছুটি-দৌড়াদৌড়ি। চিৎকার-চেঁচামেচি। কুলকুল করে ঘামতে ঘামতে হতভম্বের মতো দেখছি প্রোডাকশন বয়দের ব্যস্ততা।

মুশকিল হচ্ছে পরিচালক দেবাংশু সেনগুপ্তকে চিনি না। এর আগে কয়েকটি ধারারাবাহিকের শ্যুটিং কভার করার অভিজ্ঞতায় জেনেছি এই সময়টা সাধারণত পরিচালক ফ্লোরে থাকেন না। তিনি তাঁর প্রধান সহকারীকে নিয়ে মেকআপ-রুমে কিংবা ফ্লোরেরই কোনও নিভৃত কোণে পাখার সামনে বসে হয় পরবর্তী শট নিয়ে আলোচনা করেন, নতুবা শিল্পীকে দৃশ্য বোঝান। একঝলক চোখ বুলিয়ে ফ্লোরের কোনও কোণেই পরিচালকের মতো দেখতে কাউকে পেলাম না। তাহলে কি তিনি মেকআপ-রুমে? মহাপ্রভুর মেকআপ-রুমও কোনটা ছাই জানি না। বাইরে ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ। কোন খুপরিতে দেবাংশু সেনগুপ্ত সেঁধিয়ে আছেন খুঁজে বার করা আর ঝোপঝাড়ের আড়ালে কোনও লুকোনো গর্ত হাতড়ে শেয়ালের বাচ্চা খোঁজা একই ব্যাপার।

একজনকে চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলাম ‘দেবাংশু সেনগুপ্ত কোথায়?’ তিনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করছি জল কোথায়? পরিচালক হিসেবে দেবাংশু তখন রীতিমতো সেলিব্রিটি। এর আগে তাঁর পরিচালিত ধারাবাহিক ‘রাজেশ্বরী’ ছোটপর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছে। ‘মহাপ্রভু’রও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। না, তখনও টিআরপি নামক নেংটি ইঁদুরটি চ্যানেলের চোরাকুঠুরিতে ছুটোছুটি শুরু করেনি। কারণ, তখন ধারাবাহিকগুলি সম্প্রচারিত হতো মূলত দূরদর্শনে। ‘মহাপ্রভু’ যখন দেখানো হত, তখন অলি-গলি, পাড়া-বেপাড়া সব শুনশান হয়ে যেত। এহেন অবস্থায় স্টুডিও পাড়ায় দাঁড়িয়ে সেই সময়ের ছোটপর্দার অন্যতম শীর্ষ পরিচালককে না চেনাটা ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’। তখনও বাজার চলতি বিনোদন ম্যাগাজিন বা খবরের কাগজে শুক্রবারের টিভি-সিনেমার পাতা ওল্টানোর অভ্যাস হয়নি। কমলদা (কমলকুমার ঘোষ) যখন অ্যাসাইনমেন্টটা দেন, তিনি এটা ধরেই দিয়েছিলেন যে আমি দেবাংশু সেনগুপ্তকে চিনি। আমার সঙ্গে সেদিন ছবি তুলতে গেছিল চিত্রসাংবাদিক জয়দীপ দত্ত। তারও অবস্থা আমার মতো। দুজনে মিলে দু-চার জনকে জিজ্ঞাসা করে কোনও সদুত্তর পেলাম না। আমি দাঁড়িয়ে আছি ভ্যাবলার মতো, জয়দীপ ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে বোকার মতো।

প্রায় যখন শট রেডি, মানে দৃশ্য অনুযায়ী আলো, ক্যামেরা প্রস্তুত। শিল্পীকে মেকআপ-রুম থেকে ডাকতে পাঠানো হয়েছে। কাকে জিজ্ঞাসা করা যায় ভাবতে গিয়ে দেখি নীল জিনস আর সাদা স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরা খুব ফর্সা এক অবাঙালি লাইট অ্যাসিটেন্স একটা বড় লাইটের স্ট্যাণ্ড ঘাড়ে করে হেঁটে আসছে। মরিয়া হয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। লাইটের স্ট্যাণ্ডটা নামিয়ে রেখে, যেখানে দৃশ্যটির অভিনয় হবে সেখানে আলোর মুখটা সেট করে দৌড়ে গিয়ে প্লাগটা বোর্ডে লাগিয়ে, সুইচ অন করে, আবার ফিরে এসে দু’পেয়ে মইয়ে উঠে আলোর সামনে ফিল্টার সেট করে, একজন সহকারীকে শিল্পীর পজিশনে দাঁড়াতে বলে, তাকে দেখে স্ট্যণ্ডটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেট করে, কাকে যেন বলল ‘ঠিক হ্যায় স্যার’? কেউ একজন অন্ধকার থেকে চিৎকার করে বলল ‘ওকে’।

স্নান করার মতো ঘামছে ছেলেটি। হিন্দিতে বললাম, ‘সান্ধ্য আজকাল পত্রিকা থেকে এসেছি। দেবাংশু সেনগুপ্তর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।’ নাকচেপ্টা, অনেকটা মণিপুরীদের মতো দেখতে ছেলেটি মুখ নিচু করে বুড়ো আঙুল দিয়ে কপালের ঘাম ঝরিয়ে বাংলায় উত্তর দিল, ‘উনি এখন ব্যাস্ত আছেন। এই শটটা হয়ে যাক। আমি আপনার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব।’

জয়দীপ ঠেলা মেরে বলল, ‘চ, বাইরে কোথাও ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াই। এক্ষুনি পাখা নিভিয়ে দেবে, তার চেয়ে বাইরে হাওয়া আছে…চ। কতক্ষণে শট শেষ হবে তার কোনও ঠিক আছে!’

ইতিমধ্যেই আমাদের জামাগুলোও ঘামে চুপচুপ করছে। বাইরে একটা কাঁঠাল গাছের তলায় এসে দাঁড়ালাম। সেখানেও প্রায় লু বইছে। তাও সই। ফ্লোরের ভেতরের চেয়ে তো ভালো। আগেই বলেছি, গোটা এনটিওয়ান যেন ঝিম মেরে আছে। হাওয়া তো দিচ্ছে হু হু করে, কিন্তু তাতে নাকমুখ ঝাঁঝিয়ে যাচ্ছে। হাওয়ায় গাছের পাতা নড়ার শব্দ আর নানা জাতের পাখির আওয়াজ যেন আস্ত চত্বরটার নীরবতাকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। স্টুডিওর ফ্লোরের ভেতরের কর্মযজ্ঞ বাইরে থেকে আন্দাজ করা মুশকিল। কিন্তু মিনিট পাঁচেক পরেই বাইরে থেকেই শুনতে পেলাম, ‘কাট..ওকে.. ফ্যান্টাস্টিক… লাঞ্চ ব্রেক।’ জয়দীপ বলল, ‘চ… এই বেলা ধরতে হবে… না হলে সেই লাঞ্চ ব্রেকের পর… মানে পাক্কা একঘন্টা গরমে গলতে হবে।’

দু’পা এগিয়েছি, দেখি সেই নেপালি টাইপ ছেলেটি ফ্লোরের বাইরে বেরিয়ে আসছে। কাঁধে একটা সাদা তোয়ালে। তার একপ্রান্ত দিয়ে মুখ মুছছে। ফর্সা শরীরের যে অংশটুকু দেখা যাচ্ছে, তাতে টকটক করছে গোলাপী রঙ। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমি জয়দীপকে বললাম, ‘আমাদেরই খুঁজছে মনে হয়।’ চিৎকার করে বললাম, ‘এই যে ভাই এদিকে… যাব? কথা হয়েছে ওঁর সঙ্গে?’

ছেলেটি হাত নেড়ে আমাদের কাছে আসতে বলল। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ছেলেটি বলল, ‘হ্যাঁ… এবার বলুন।’

‘ওই যে বললাম, দেবাংশু সেনগুপ্তর সঙ্গে কথা বলতে চাই। একটা বিষয়ে ওঁর মতামতের দরকার ছিল।’

‘বলুন’… তোয়ালে দিয়ে আর একবার মুখটা মুছে, ডানহাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আমি দেবাংশু সেনগুপ্ত। নাইস টু মিট ইউ। কমলদা পাঠিয়েছেন তো। চলুন… আমার রুমে চলুন… ওখানে লাঞ্চ করতে করতে কথা বলা যাবে… (পিছন ফিরে গলা তুলে) প্রোডাকশান… আমার ঘরে আরও দুটো লাঞ্চ পাঠিয়ে দিও তো!’

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *