binodan-pagloit-ekti-mrityur-porer-golpo

পাগলৈট – একটি মৃত্যুর পরের গল্প
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়

বিয়ের পাঁচমাস পরে যার স্বামী মারা যায়, সেই মেয়েকে সমস্ত জৈবিক চাহিদাকেও মেরে ফেলতে শিখতে হয়! তার খিদে পেতে নেই – তার ঘুম পেতে নেই – তার ফেসবুক চেক করতে নেই – তাকে বাড়ি থেকে বের হতে নেই – তা না হলেই ওমনি সে ‘অস্বাভাবিক’। সন্ধ্যাকে তাই তার মা পর্যন্ত, জিজ্ঞেস করতে থাকেন, তার অসুবিধাটা কি! যে মেয়ের সদ্য স্বামী মারা গেছে, সে কিভাবে মা-বাবার চায়ে চিনি হবে না মনে রাখছে- ইন্ডিয়ান স্টাইল বাথরুম ব্যবহার করতে অসুবিধা হবে মনে করে মাকে ফিরে যেতে বলছে – তার মা ভাবতেও পারছেন না। একই মনোভাব বান্ধবী নাজিয়ারও। এই অবস্থায় যে কেউ পেপসি এবং চিপস খাওয়ার বায়না ধরতে পারে কিংবা ফুচকা খেতে বাড়ির বাইরে যেতে পারে – তা সে কল্পনাও করতে পারে না।

আস্তিক ছিল বাড়ির একমাত্র রোজগেরে লোক। বাবা, মা, ভাই এবং স্ত্রীকে রেখে হঠাত মারা যাওয়ার পর, ছবি শুরু। মাত্র পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল আস্তিক ও সন্ধ্যার। কিন্তু তাদের মধ্যে এমন কোনও ইমোশ্যানাল বন্ডিং তৈরি হয় নি যাতে আস্তিকের চলে যাওয়ায় সন্ধ্যা ভেঙে পড়বে। স্বামী-স্ত্রীর একত্র গল্পও ছিল না তাদের। তবে এই আকস্মিক মৃত্যুর অভিঘাতে পুরো পরিবার মূহ্যমান! বাবা-মায়ের শোক এক রকম – আত্মীয় পরিজনের শোক অন্যরকম। এসবের মধ্যে যেন একটা আলাদা নির্জন দ্বীপে দাঁড়িয়ে স্ত্রী সন্ধ্যা এবং অশীতিপর ঠাকুমা। তারা পরস্পরের বন্ধু। তাই যখন সন্ধ্যা, আস্তিকের আলমারি থেকে আকাঙ্ক্ষার ছবি খুঁজে পায় – সবার আগে সে ঠাকুমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে। সে বৃদ্ধা পুত্রবধূ ছাড়া সবার নাম ভুলে গেছেন। তবু তাঁর হাসিমুখের ইঙ্গিত দেখে সন্ধ্যা ধরতে পারে, ঠাকুমা নিশ্চিত জানতেন আস্তিকের গার্লফ্রেন্ডের কথা। বারবার আকাঙ্ক্ষার কাছে ছুটে যায় সে। সমস্ত রাগ, ক্ষোভ আছড়ে পড়ে তার ওপর – কারণ, মৃত স্বামীর কাছে তো অভিযোগ করা যায় না! এর মধ্যে আস্তিকের পঞ্চাশ লাখ টাকার জীবনবিমার অর্থ পায় সে। পালটে যায় চেনা পারিবারিক বাতাবরণ। টাকা- মধ্যবিত্ত ভারতীয় পারিবারিক কাঠামোর অসাড়তাকে নিমেষে পালটে দিতে পারে। যার জন্যে, পুত্রের কাজ হওয়ার আগেই বিধবা বউকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দিতেও দুবার ভাবে না আপাত রক্ষণশীল অভিভাবকগণ। এঁদের দ্বিচারিতা সীমাহীন। ওদিকে সন্ধ্যার মায়ের পরিবর্তন ঘটে। এতোদিকে মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টপার, সন্ধ্যা নিজেও স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদ অনুভব করে এই প্রথমবার।

অসম্ভব ভাল কাজ করেছেন সন্ধ্যার ভুমিকায় সোনিয়া মালহোত্রা। আস্তিকের বাবা এবং মায়ের চরিত্রে আশুতোষ রাণা ও শিবা চাড্ডা দুরন্ত। বিশেষ করে আশুতোষের কথা উল্লেখ করা দরকার। আকাঙ্কার ভূমিকায় সায়ণী গুপ্ত যথাযথ। নেটফ্লিক্সে স্ট্রিমিং হওয়া এই ছবিটি, নিঃসন্দেহে ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছায়াচিত্রের প্রতীক।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *