aparbangla-editorial-edition-10

সম্পাদকীয়

সম্পাদকের কলমে

চামড়ার রং কালো হবার অপরাধে প্রকাশ্যে জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল আমেরিকার পুলিশ, প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল সারা দেশ। কোভিডবিধি না মেনে রাস্তায় নেমেছিল মানুষ। ঘাতক পুলিশ অফিসারের শাস্তি সেদিনই ঘোষণা করে দিয়েছিল জনসাধারণ, যাকে মান্যতা দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।

চুরাশি বছর বয়সী দলিত সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামী, ফাদার স্ট্যান জেলবন্দী ছিলেন। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত মানুষটির নিজের হাতে খাওয়ার ক্ষমতা ছিল না, ছিল না চুমুক দিয়ে জল খাওয়ারও ক্ষমতা। কানেও শুনতে পেতেন না ঠিকমত আর চশমা ছাড়া ছিলেন একদম অন্ধ। তবু, সরকারি মতে, গণতন্ত্রের জন্য তিনি অত্যন্ত বিপদজনক ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। সম্প্রতি জেলেই মারা গেলেন ফাদার স্ট্যান, গণতন্ত্র রক্ষা নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা রইল না।

কিন্তু আমাদের দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। জেলবন্দী রয়েছেন অসুস্থ কবি ও সমাজকর্মী, অশীতিপর ভারভারা রাও। বারবার আবেদন করা সত্বেও তাঁর জামিন নামঞ্জুর, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও দেওয়া হয় না। কবি- সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবিরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন, লাভ কিছু হয়নি। ফাদার স্ট্যানের পর এবার কি তবে ভারভারা রাও? আমরা কি পারি না অসুস্থ, বৃদ্ধ এই কবিকে সম্মানজনক মৃত্যুর অধিকারটুকু অন্তত ছিনিয়ে এনে দিতে?

বিশ্বজুড়ে কোভিডের দাপট ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যালেন্ডারে একবছর কেটে গেলেও মানুষের দুঃসময় এখনো কাটেনি। একের পর আসছে কোভিডের ঢেউ, সেই সঙ্গে ভাইরাসের নতুন নতুন প্রজাতি। তবে আমরাও হারতে শিখিনি, সত্তর হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে টিঁকে থাকা হোমো স্যাপিয়েন্সরা বিশ্বাস করে, খুব তাড়াতাড়িই লড়াইটা জিতে তারা ফিরিয়ে আনবে পুরনো, ছোঁয়াছুঁয়ির বালাই-বর্জিত পৃথিবী আর মুখোশহীন মানুষদের। অবশ্য তার জন্য কিছুদিন এখনো কষ্ট করতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।

গতবছর থেকে শুরু হয়েছে বাংলা সাহিত্য জগতে ইন্দ্রপতন। একে একে চলে গেছেন বোধিবৃক্ষস্বরূপ আমাদের প্রিয় কবি সাহিত্যিকেরা। এবছর একুশে এপ্রিল সকালে চলে গেলেন সকলের ভালোবাসার মানুষ কবি শঙ্খ ঘোষ, বাংলা সাহিত্য জগৎ পুনর্বার অভিভাবকহীন হল। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পত্রিকা তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। শঙ্খ ঘোষের জীবন এবং সৃষ্টির তালিকাকে দুইমলাটে বন্দী করে একটি অবশ্য সংগ্রহযোগ্য পত্রিকা প্রকাশ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের কাজের প্রতি রইল আমাদের শ্রদ্ধা। প্রিয় কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল অপারবাংলার এই সংখ্যায়, সৌমিত্র বসুর স্মৃতিচারণে। চলে গেলেন বাংলাদেশ একাডেমীর মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ভাই। অপারবাংলার উপদেষ্টা মন্ডলীতে তিনি ছিলেন অপারবাংলার জন্মলগ্ন থেকে। আমরা হারালাম আমাদের অভিভাবককে। আমরা হারিয়েছি আমাদের শিক্ষক ডঃ শামসুজ্জামান খানকে। পূরবী বসু কলম ধরেছেন স্যার ডঃ শামসুজ্জামান খানের স্মৃতিচারণাতে, বিবিধ বিভাগে।

সম্প্রতি চলে গেলেন আরও দুজন গুণী সাহিত্যিক, অনীশ দেব এবং শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়। অপারবাংলার সম্পাদক মন্ডলী তাঁদের অভাব আরও বেশি করে অনুভব করছে এই মুহূর্তে, কারন এই জুলাই সংখ্যাতে তাঁরা লিখতে প্রতিশ্রুত হয়েছিলেন। টিম অপারবাংলা শ্রদ্ধাবনত তাঁদের স্মৃতির প্রতি।

তেরোটি গল্প, তেরোটি অণুগল্প, একুশটি কবিতা সহ আছে বিভিন্ন লেখা অনুবাদ, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, স্মৃতিচারণা, ভ্রমণ, রান্নাঘর, বিনোদন বিভাগে। পবিত্র সরকার স্যার এর রম্যরচনা বেশ রসবোধের। এই মহামারীতে আমাদের তা আরো বেশি করে দরকার। বিনোদনে প্রিয়ব্রত দত্ত এর ধারাবাহিক লেখাতে এবার অনেক অজানা কথা জানতে পারবেন অভিনেতা যীশু সেনগুপ্তের প্রথম আত্মপ্রকাশের ফিল্মসেটের। আশা করি অপারাবাংলা পাঠকদের আমরা আরো একটি সমৃদ্ধ সংখ্যা উপহার দিতে পেরেছি। অপেক্ষা করুন অপরাবংলা শারদীয়া সংখ্যার জন্য খুব শিগগিরই।

ভালো থাকুন। পৃথিবীকে সুস্থ রাখুন নিজের সাবধানতা অবলম্বন করে।

ধন্যবাদ
শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা সাহিত্য পত্রিকা

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *