শুভ নাথ
আরও একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ, পৃথিবী তার পরিণতির দিকে এগোল আর এক ধাপ। জীবনের কিস্তি মেটানোর জন্য যে সময় নির্ধারিত ছিল আমাদের হাতে, তা থেকে কমে গেল একটি বছর।
নাহ্! এভাবে ভাবব না আমরা। আমরা বরং ভাবি, জীবনের রূপ রস আস্বাদনের জন্য আমরা পেলাম আরো খানিকটা সময়, তাই কৃতজ্ঞ থাকি, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি পূর্ণতার দিকে আরো কয়েক ধাপ।
নতুন বছরে কী-ই বা নতুন হয়, ক্যালেন্ডার ছাড়া? তবে পুরনো ‘আমি’টার মধ্যে লুকিয়ে থাকা নতুন ‘আমি’টাকে টেনে বার করে আনা যায় যেকোনো দিনই, তার জন্য ক্যালেন্ডারের বদল প্রয়োজন নেই। নিজেকে বদলাতে পারলে দুনিয়াও পাল্টে যাবে, তখন প্রতিটা দিনই নতুন, প্রতিদিনই জীবনের উদযাপন।
আমরা একবারই বাঁচব এটা যেমন সত্যি, তেমন এটাও সত্যি যে আমাদের বাঁচার জন্য একটাই পৃথিবী রয়েছে। তাই, জীবনের উদযাপন করতে গিয়ে, নিজেদের খুশিতে বাঁচার মত বাঁচতে গিয়ে আমরা যেন ধরিত্রীর মৃত্যু না ডেকে আনি। অবৈধ, অবৈজ্ঞানিক এবং যথেচ্ছ নির্মাণের কারণে আস্ত একটা জনপদ ভূগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে, কিছু মানুষের লোভের মাশুল গুনতে হচ্ছে একটা জনগোষ্ঠীকে, এসব দেখেও কি আমাদের সম্বিত ফিরবে না?
অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব কে আমরা হারিয়েছি গত বছর। গত ঊনত্রিশে ডিসেম্বর চলে গেছেন এক জাদুকর, এডসন। তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধা। বিধ্বস্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে গুটিয়ে থাকা একটা দেশকে মেরুদণ্ড সোজা করে, বাকি বিশ্বের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখিয়েছেন যে মানুষটি, একটা চামড়ার গোলক দিয়ে একটার পর একটা কবিতা লিখে গেছেন যে মহাকবি, সেই মানুষটি, আমাদের সকলের প্রিয় পেলে, তিনি মৃত্যুহীন।
‘অপারবাংলা’ পা রাখল পাঁচ বছরে। এখন সে প্রত্যয়ী এবং পরিচিত। পৃথিবীর সমস্ত দেশে, বাংলাভাষায় যাঁরা সাহিত্যচর্চা করেন তাঁদের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে পেরেছে সে বিগত চার বছরে। ধীরে ধীরে আস্থাযোগ্য হয়ে উঠছে ‘অপারবাংলা’, তাই তার দায়িত্বও বাড়ছে। সেইসঙ্গে পাঠকদের চাহিদাও বাড়ছে তার কাছে। আমরা চেষ্টা করছি সেসব দাবি পূরণ করার। অনেক নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে। ‘গল্প’ এবং ‘উপন্যাস’ বিভাগ সাজিয়ে তোলা হয়েছে রঙিন ইলাসস্ট্রেশনে। যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে ‘অপারবাংলা’কে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সহজভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার, এখন এক ক্লিকে পূর্বাপর সব সংস্করণে কোনো বিশেষ জঁরের লেখা পড়া সম্ভব হচ্ছে, খোলা যাচ্ছে পুরোনো সমস্ত সংস্করণ।
এবারের সংখ্যায় ঔপন্যাসিকা লিখেছেন রাজ্যশ্রী বসু অধিকারী। বিবিধ বিভাগের দুটো ফিচার দুর্দান্ত! নন্দিনী নাগ লিখেছেন একজন বিস্মৃত বাঙালি বিজ্ঞান ব্রতীকে নিয়ে। আর তৃষ্ণা বসাক লিখেছেন বাংলা সাহিত্যে নানা পেশার নারীদের নিয়ে। রান্নাঘরে এবারের লেখা রেসিপি ভিত্তিক নয়। সুমনা সাহার বাঙালির পিঠে সংস্কৃতি নিয়ে লেখা অনেক তথ্যে ভরা। বৈশাখী ঠাকুরের প্রবন্ধ পড়ুন অনেক অজানা তথ্য জগন্নাথ বিগ্রহ নিয়ে। জয়তী রায় এর কলমে আসুন তুরস্ক ভ্রমণ করে আসি।
প্রতি সংখ্যার মতো এবারেও অপারবাংলার জন্য লিখেছেন ভারত, বাংলাদেশ, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট লেখকরা। ন’টি গল্প, এগারোটি অণুগল্প, উপন্যাস, কবিতা গুচ্ছ, ফিচার, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, রান্নাঘর, বিনোদন নিয়ে আশা রাখছি আপনারা আবার একটা দারুন সংখ্যা উপভোগ করবেন কলকাতা বইমেলার সাথে।
আনন্দ হোক।
শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা সাহিত্য পত্রিকা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন