ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়
সত্যজিত রায়ের চার’টি ছোটগল্পকে নিয়ে নির্মিত সিরিজ ‘রে’, সম্প্রতি ওটিটি প্লাটফর্মে রিলিজ করেছে। দর্শকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার পারদ, শীর্ষে তুলে দিয়ে, শেষ অবদি একেবারে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে, পরিচালকদের কীর্তিতে। সিরিজের চারটি ছবি, যথাক্রমে – ফরগেট মি নট ( পরিচালক – সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মূল গল্প – বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম) , হাঙ্গামা হ্যায় কিঁউ বরপা (পরিচালক – অভিষেক চৌবে, মূলগল্প – বারীন ভৌমিকের ব্যারাম), বহুরূপীয়া( পরিচালক – সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মূলগল্প – বহুরূপী), স্পটলাইট ( পরিচালক –ভাসান বালা,মূলগল্প – স্পটলাইট), দেখতে দেখতে প্রথমেই যে বিষয়টা মনে হয়, পরিচালকরা কেন সত্যজিত রায়ের গল্পগুলোকে নির্বাচন করলেন! ছবি নিকৃষ্টমানের হলেও গল্পগুলো অন্তত অভিনব হতে পারতো। ফরগেট মি নট, স্পটলাইট, বহুরূপীয়া – তিনটি ছবিই সিনেমা হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের। কেবল যৌনতায় সুড়সুড়ি দেওয়া সংলাপ, প্রতিটি বাক্যে ইংরেজি স্ল্যাং দিয়ে ছবি উতরে দেওয়া যায় না – অভিনেতাদের কাজও বিফলে যায় গল্পের বাঁধুনি না থাকলে। এবং ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটেছে, রে, সিরিজে। শুরুতেইসৃজিত মুখার্জি হতাশ করেছেন, ফরগেট মি নট ছবিতে। আলি জাফরের মতো অভিনেতাকেও তিনি কাজে লাগাতে পারেন নি। মূল গল্পের সঙ্গে সাযূজ্য তো দূরে থাক – ছবিটির নির্মাণে আধুনিকতার পরাকাষ্টা হিসেবে শুধু যৌনাচার এবং ‘ফাক’ শব্দটির ব্যবহার ছাড়া বিশেষ কিছুই করতে পারেন নি পরিচালক।
একই কথা বলা যায়, স্পটলাইট ছবিটির ক্ষেত্রেও। সেখানেও যেভাবে গল্পকে সেলুলয়েডে আনা হয়েছে, তার ট্রিটমেন্ট আদ্যান্ত অযৌক্তিক। সেই সঙ্গে এতগুলো বিষয়কে পরিচালক, একসঙ্গে পর্দায় আনতে চেয়েছেন – যে পুরো ছবিটাই ঘেঁটে ঘ। ফলে চন্দন রায়সান্যালের মতো দক্ষ অভিনেতাও সুযোগ পান নি ভাল কাজ করার।
বহুরূপীয়া ছবিতে কে কে মেননের প্রস্থেটিক মেক-আপ এমন হাস্যকর লাগে যে, পীরবাবা কেন, যে কোনও সাধারণ মানুষও এক নজরে বুঝে যাবেন, কে কে মেনন ছদ্মবেশে আছেন।
রে- সিরিজের চারটি ছবির মধ্যে কেবল, হাঙ্গামা হ্যায় কিঁউ বরপা, তবু কোনওমতে বসে শেষ করা সম্ভব – কিন্তু বাকি তিনটি ছবি কোনওভাবেই উতরায় নি। মনোজ বাজপেয়ী এবং গজরাজ রাও খানিক কাজ করতে পেরেছেন – যদিও একটি ট্রেনের কামরায় দুই চরিত্রের দীর্ঘক্ষণের কথোপকথন দেখতে দেখতে একটা সময় দর্শকের বোরডম আসতে বাধ্য। এই ছবিটি খানিক ক্লস্টোফ্যোবিকও বটে। তবু, পরিচালকের মুন্সীয়ানার কারণে এই ছবিটি, কিছুটা মনোরঞ্জন করতে সক্ষম। বাকি তিনটি ছবি – যদি সত্যজিত রায়ের গল্পের অনুষঙ্গ বাদও দেওয়া যায়, তবু কোনও মতেই সিনেমা হিসেবে মাঝারি মানেও পৌঁছতে পারে নি।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন