micro-story-antardahan

অন্তরদহণ
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছিল অহন। সেই পুরানো টালির চালের ঘর দুটো ভেঙ্গে পৌরসভার ঘর হয়েছে। সামনে একচিলতে বারান্দার কোণে মাধবীলতা। ফুল-ছাপ হলুদ পর্দা জানলায়। হঠাৎ বাড়িটার সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রিক্তাকে দেখে অহন। ছিপছিপে চেহারাটায় হাল্কা মেদ জমলেও তাতে রিক্তার সৌন্দর্য ম্লান হয়নি, উসকো খুসকো চুল বাতাসে উড়ছে, দু চোখে রাত জাগার ক্লান্তি, শ্লথ গতিতে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে অহনকে দেখে থমকে দাঁড়ায় রিক্তা।

মায়ের বলা কথাগুলো অনুরণন তোলে বুকের ভেতর। তবে কি মায়ের কথাই ঠিক! সারাটা রাত কোথায় কাটিয়ে আসে রিক্তা? কী এমন চাকরি যে শুধু রাতেই যেতে হয়? হাজারটা প্রশ্ন মাথার ভেতর কিলবিল করে ওঠে। এগিয়ে গিয়ে রিক্তার পথ আটকে দাঁড়ায় অহন।

”তুমি? কবে ফিরলে?” বিষণ্ণ ক্লান্ত চোখ দুটো তুলে প্রশ্ন করে রিক্তা। সামান্য হাসির আভাস ফুটে ওঠে রিক্তার মুখে। এখনও হাসলে টোল পড়ে ওর ভাঙ্গা গালে।

”এসব কী? কোথা থেকে ফিরলে এত সকালে?” না চাইতেও কঠিন হয়ে ওঠে অহনের স্বর।

একটু যেন চমকে ওঠে মেয়েটা!

”মা বলেছিল তোমার কথা, বিশ্বাস করিনি। তবে আজ তিনদিন ধরে খেয়াল করছি তোমায়, কার গাড়ি তোমায় প্রতিদিন ছেড়ে দিয়ে যায়?”

মেয়েটার চোয়াল শক্ত হয়। বলে, ”সবই যখন জেনেছ তবে এলে কেন?”

”একটু অপেক্ষা করতে পারলে না আমার জন্য?”

চোখ দুটোয় যেন আগুন জ্বলে ওঠে রিক্তার, বলে, ”চারটে পেট, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, ভাইয়ের পড়া, বোনের….”

“মা ঠিকই বলে। গরিবদের চরিত্র খারাপ হতে সময় লাগে না। কত মেয়ে টিউশন করে, ছোট চাকরি করেও তো সংসারটা টানছে। তুমি তো পড়াশোনায় ভাল ছিল, তুমি কি চাইলে ভদ্র পথে…, এটলিস্ট আমায় জানাতে পারতে!”

খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে রিক্তা। বলে, ”ঠিক বলেছ। তোমায় জানাতে পারতাম! তবে আসল কারণটাই বলি তোমায়। আমি এ পথে গেছি নিজের চাহিদা মেটাতে। তুমি তো তখন বিলেতে…”

ঠাস্ করে একটা শব্দ।

আর পিছন ফিরে তাকায়নি অহন, মায়ের কথাই ঠিক। রিক্তা একটা নোংরা মেয়ে। সময় থাকতে বুঝতে পেরেছে ও।

আর কিছু ভাবতে পারে না ছেলেটা।

বনেদি পরিবার, বড়-ঘর, সবচেয়ে বড় কথা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে প্রিয়া। সম্বন্ধটা প্রায় হয়েই গেছিল। প্রিয়াকে ওদের বেশ পছন্দ হয়েছে। সপরিবারে আজ প্রিয়াদের বাড়ি নৈশভোজে এসেছে অহনরা। প্রিয়ার ঠাকুমা পঙ্গু, তবুও মাথার উপর রয়েছেন ছাতার মতো। তাঁর কথাই এ পরিবারের শেষ কথা বলেছিলেন প্রিয়ার বাবা।

পায়েসের চামচটা মুখে তুলতেই জোর বিষম খায় অহন। প্রিয়ার ঠাকুমাকে হুইল চেয়ারে ঠেলে নিয়ে আসছে তাঁর আয়া।

“এসো মা, এই আমার মা। আর এ আমার আরেক মেয়ে বলতে পারেন, রিক্তা। ওর সেবাতেই মা আবার ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে, গত আড়াই বছর ধরে ও আমাদের বাড়ির মেয়ে হয়ে গেছে। রাতটা ও থাকে বলেই আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাই…”

আওয়াজ না হলেও অহনের গালটা কেমন জ্বালা করে ওঠে…

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *