micro-story-elop

ইলোপ
পার্থ দে

একটা বারান্দা। চারতলার নিচে ব্যস্ত শহর, জনস্রোত। ছেলেটা মেয়েটার পাশে এসে দাঁড়াল। এই বারান্দায় দুজনের প্রায়ই দেখা হয়।

চোখে নতুন সানগ্লাস আর বাবার কিনে দেওয়া নতুন টিশার্টটা পরে ছেলেটা বলল, “আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলো তো?”

মেয়েটা হাসি চেপে আঙুলের তর্জনী আর বুড়ো আঙুল জুড়ে একটা ভঙ্গি করে বলল, “দারুণ! তাও যদি মাথায় একটু চুল থাকত!”

ছেলেটা রাগ করল না। নিজের টাকে হাত বুলিয়ে হেসে ফেলল। মেয়েটার যে কোনো কথা ইদানীং ওর ভাল লাগছে, সে রসিকতা হোক কিংবা আবেগের কথা। কে জানে একেই ভালবাসা বলে কিনা, এই একুশ বছর বয়স পর্যন্ত সে যে এভাবে কোনোদিন কাউকে ভালবাসেনি! এই নতুন জায়গাটায় আসার পর যেন জীবন অন্যদিকে বাঁক নিতে চাইছে।

মেয়েটা হাসল, সেই হাসি তার চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়ল, “এই যে মশাই, মতলবটা কি? মোটেই তো ভাল ঠেকছে না? গালদুটো ব্লাশ করছে দেখছি। প্রেমে টেমে পড়োনি তো আমার?

ছেলেটা খানিক লজ্জা পেল। মেয়েটা ওইরকমই। সোজাসাপটা কথা বলার বান্দা। মুখে যা আসে তা বলে দেয়। কিন্তু মেয়েটার মনেও তাকে ঘিরে কোনো ফিলিংস তৈরি হচ্ছে না তো! যদি হয়… যদি হয়… বেশ হয়! ছেলেটার বুকের ভিতর একটা ছোট্ট কাঁপন।

মেয়েটা এবার ছেলেটার আরও কাছে সরে এসে বসল। কৌতুকের সুরে বলল, “মনে করো, তুমি রণবীর কাপুর…”

ছেলেটা ওকে মাঝপথে থামিয়ে মজার ছলে বলে, “আর তুমি আলিয়া, তাই তো?”

“হুম, তাইই তো। রণবীর আর আলিয়ার মতো আমাদের তো এই বারান্দাতেই রোজ দেখা হয়, কথা হয়। শুনেছ তো, রণবীর-আলিয়ারও একটা বারান্দা আছে, সেখানেই ওরা বেশি সময় কাটিয়েছে। ভালবাসার বারান্দা। ওই বারান্দাতেই ওরা বিয়ে করেছে!”

“আমিও তো তোমায় ভালবাসি,” ছেলেটা একটু সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফেলে।

মেয়েটা অবাক হয় না। বলে, “জানি তো, তুমি আমায় ভালবাসো… হয়ত আমিও…”
“হয়ত আমিও কী? তুমি বাসো না।”

“হয়ত… আমিও বাসি… কিন্তু আমাদের সম্পর্কটার মধ্যে কোনো রোমাঞ্চ নেই যে। রোমাঞ্চ, বাধাবিপত্তি আর একটু লড়াইটড়াই না থাকলে ভালবাসা জমে, বলো! মনে করো তুমি পৃথ্বীরাজ চৌহানের মতো ঘোড়া ছুটিয়ে এসে আমাকে এক ঝটকায় তুলে নেবে, তখন নিজেকে সংযুক্তা মনে হবে। অথবা রোমিও-জুলিয়েট, হীর-রাঞ্ঝা, সোনী-মহিওয়াল, লয়লা মজনুর মতো দুজনের বাড়ির তরফে খুব ঝগড়াঝাঁটি হবে, দু-চারটে লাশ পড়বে, তার মধ্যে দিয়ে আমাদের সম্পর্কটা অমর হয়ে উঠবে—এই রকম রোমাঞ্চ চাই।”

“কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব”, ছেলেটা চিন্তিত মুখে বলে, তোমার মা, বাবা, দাদা, দিদি এমনকি দাদু, ঠাকুমা সবাই তো আমাকে খুব ভালবাসেন… ”

“হ্যাঁ, সেটাই তো,” মেয়েটাও মুখ ভার করে বলে, “তোমার মা, বাবাও তো আমাকে খুব ভালবাসেন, আর তোমার দিদি তো তোমার চেয়েও আমাকে বেশি ভালবাসে… কি মুশকিল বলো তো… দুপক্ষের লড়াই হওয়ার তো কোনো চান্স দেখছি না।

“তাহলে উপায়?”

“সে আমি কি জানি! উপায় তুমি বের করো। ঘোড়া তুমি জোগাড় করো। আমি তোমাকে একটু সাহায্য করতে পারি। তুমি ঘোড়াটা নিয়ে এই বারান্দাটার নিচে এসে আমার নাম ধরে ডাকবে। আমি কয়েকটা শাড়ি আর বিছানার চাদর জোগাড় করে রাখব। সেগুলো জুড়ে জুড়ে একটা লম্বা রশি বানিয়ে এই বারান্দা দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামব আর তুমি টুক করে আমাকে ঘোড়ায় চাপিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাবে। ব্যস্, এর বেশি আমি কিছু করতে পারব না বলে দিলাম।

ওদের পিছনে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন দুই মধ্যবয়সী আগন্তুক। প্রথমজন দ্বিতীয়জনকে বললেন, “এই দেখুন ডাঃ চৌধুরী ছোট ছোট দুটো ছেলেমেয়ে কেমন বাপ-মা, ভাইবোনকে ছেড়ে একেবারে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছে! ওদের কী বলি বলুন তো! মেয়েটা স্টেজ থ্রি লিউকেমিয়ার পেশেন্ট। ছেলেটা স্টেজ ফোর লিভার ক্যান্সার!

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *