মারাঠি সন্ত কবিতা
ভূমিকা ও অনুবাদ– বেবী সাউ

জানাবাঈ

জানাবাঈ তেরশো শতাব্দীর সপ্তম বা অষ্টম দশকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবং ১৩৫০ সালে মারা গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তিনি ছিলেন একজন ‘অস্পৃশ্য’ দম্পতির কন্যা, তার বাবা জানাবাঈকে পান্ধরপুরে নিয়ে যান যেখানে তিনি দামাশেতীর গৃহে দাসী হিসাবে কাজ করেছিলেন, যিনি বিশিষ্ট মারাঠি ভক্তিবাদী কবি নামদেবের পিতা ছিলেন। জানাবাঈ সম্ভবত নামদেবের চেয়ে একটু বড় ছিলেন অনুমান করা হয়। দামাশেতী এবং তার স্ত্রী, গোনাই, অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। ধর্মীয় পরিবেশের প্রভাব এবং তার সহজাত প্রবণতার কারণে, জানাবাঈ, পান্ডারফুরের প্রধান দেবতা বিঠলের একজন নিষ্ঠাবান ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন। যদিও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, তিনি অনেক চমৎকার অভঙ্গ (अभंग) রচনা করেছিলেন যার কিছু নামদেবের পাশাপাশি সংরক্ষিত আছে। মনে করা হয় জানাবাঈ প্রায় তিনশো অভঙ্গ রচনা করেছিলেন।

১. অন্তহীন নাচ/ জানাবাঈ

শুধু নামটি তোমার
আমার এ চোখ পরিপূর্ণ করে তোলে…
আমি নাচতে চাই তোমার জন্য,
অন্তহীন নাচ…

সবকিছুতেই
শুধু তুমি আর তুমি…
এভাবেই তৈরি হোক আমার পৃথিবী…

জানি, তাই প্রার্থনা করেই চললেন, রাত্রি এলো
তার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও এলেন

২. বিঠাবাই, নারী আমার, এসো/ জানাবাঈ

এসো,
এসো আমার নারী, বিঠাবাই…
আমার পন্ধারপুরার মা…
ভীমা ও চন্দ্রভাগা নদী
তোমার পা থেকে লাফ দেয়,
আমাদের গঙ্গা।

তুমি, তোমার সাথে নিয়ে এসো
তাদের
আমার বাড়িতে
আমার উঠোনে নাচো তুমি তাদেরই সাথে…
জানি বলেছে, জীবন তাহার প্লাবিত হোক রঙে

মুক্তাবাঈ

মুক্তা তথা মুক্তাবাঈ ছিলেন ভারকারি ঘরানার সন্ত। তাঁর জন্ম তেরশো শতকের শেষের দিকে এক দেশস্থ ব্রাহ্মণসমাজে। তিনি ভারকারি সাধক জ্ঞানেশ্বরের ছোট বোন। মুক্তাবাঈ-এর একচল্লিশটি অভং সংকলন ‘তাতিছে অভং'(দ্য সং অফ দ্য ডোর) এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

১. নিরাকার শাখায় দোলনা বাঁধা/ মুক্তাবাঈ

নিরাকার শাখায় দোলনা বাঁধা,
মুক্তাইয়ের ছেলে শুয়ে আছে ভিতরে।

ঘুমাও, ঘুমাও, ছোট্ট সোনাটি,
এত কথা কেন চারপাশে?
সামান্য এই হাত-তালি
করে তোলে অমনোযোগী!

এখন তো ঘুম নেই, জেগে বা থাকা কেন?
শুধু সতর্কতা, এই সচেতনতা ভাঙো…

এমন রাজ্যের নাম নেই তবুও
এটিই দেখা দেয় তোমাকেই…
তোমার চোখটিকে ঘুরাও অন্তরে;
এখন বিনামূল্যে ভাসমান তুমিও…

এমন দোলনায় তুমিও কাতময়,
এই স্বাচ্ছন্দ্যে এখন ভেসে যাও,
মনটি দোলা দেয়, তবু বাঁধা হাওয়ায়…

ছয় ঘন্টার দোলনাটি এই, দৃষ্টিটি তাহার এখনও স্থির।
মুক্তাই বলেছে, শোন! চাঙ্গ্যা
জাগো! প্রস্তুত হও…

২. এটি দেখেছ তুমি/ মুক্তাবাঈ

তুমি দেখেছ, তাই এটি আছে…
বেদ বলে, বাস্তবতা বাহু প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে
আর কোথায়ই বা দেখতে পাবেন এমন
চাঁদের আলোর স্রোত?

এতদিন যা যা শিখেছ তুমি…
তুমি যা যা বিশ্বাস করেছ এতদিন
তোমার দর্শন তোমাকে দেখায়
এবং অনুমানে গড়ে উঠি আমরাই

অথচ একটাই আত্মা

মুক্তাবাঈ বলেন নিজেকে নিজে, “মুক্তির লক্ষণ?”
করুণার সঙ্গে সন্ধানে গেলে
দীপ্ত হয়ে ওঠে মন…

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *