poem-juddhya-birotir-kobita

যুদ্ধবিরতির কবিতা
জয়দীপ চক্রবর্তী

যে মাটিতে এসে দাঁড়িয়েছি, সে মাটি রক্তে লাল হয়ে গেছে।
গাছের পাতা থেকে, আকাশে উড়ে বেড়ানো পুঞ্জিভূত মেঘ থেকে,
এমনকি পাখির পালক থেকেও ক্রমাগত টুপটাপ গড়িয়ে নামছে রক্ত।
দিনের প্রথম প্রহর থেকে পশ্চিমে ঢলে পড়া ক্লান্ত সূর্যের গায়ে ছিটকে
লেগে যাচ্ছে সেই নাছোড় রক্তের দাগ। মাটি চটচটে হয়ে যাচ্ছে,
আঁশটে গন্ধে ভরে উঠছে চরাচর। তবু সেই রক্তের ঝরে পড়াকে
ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই।

এ সময় কবিতা লেখা যায় না। যে কোনো অক্ষরই এই প্রতিবেশে
অনিবার্য লাল হয়ে ওঠে। আমাদের ব্যর্থ আঙুলে ধরে থাকা কলমগুলি
প্রতিবাদে ফোঁস করে ওঠে। আর কাগজে লেখা এতাবৎ সমস্ত অক্ষর
বেঁকে চুরে হিলহিলিয়ে ওঠে সাপের মতন।

আমার দু’চোখ তখন চুল্লির মতো জ্বলে উঠছে,
মাথার মধ্যে গনগন করছে আগুন,
সেই আগুন নাকের ফুটো দিয়ে, কানের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে এসে
ক্রমশ মিশে যেতে থাকে রক্তের সঙ্গে, কাদার সঙ্গে, ফেলে দেওয়া
গর্ভফুলের মধ্যে অযত্নে ঘুমিয়ে থাকা না জন্মানো শিশুর সঙ্গে…

আর আমি আগুনের মধ্যে স্থির দাঁড়িয়ে পুড়ে যেতে যেতে
ফিসফিস করে বলতে থাকি, ‘সন্ধে হয়ে আসছে। অন্তত এইবার
পৃথিবীর সব প্রান্তে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক, আর
একবার অন্তত কেউ চিৎকার করে বলে উঠুক,
চিরকাল কত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় সামিল হয়েছি আমরা; কিন্তু আজ অবধি
কেউই কোনো যুদ্ধে জিততে পারিনি কারো বিপক্ষে…’

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *