prabandho-karunadhara-eso

করুণাধারায় এসো

সুমনা সাহা



‘অবতার’ শব্দের এক অর্থ অবতরণ, অর্থাৎ নেমে আসা। জীবের দুঃখে কাতর হয়ে, সমাধির মৌন-মগ্নতা ত্যাগ করে, করুণার প্রস্রবণ হয়ে তাঁর আনন্দময় স্বধাম ছেড়ে ধরায় অবতীর্ণ হন ভগবান। বাক্যমনাতীত অখণ্ড-অব্যয় সত্তা হয়েও গর্ভযন্ত্রণা স্বীকার করে মায়ায় ধরেন ‘চৌদ্দপোয়া’ মানবকায়! জীবন-যুদ্ধে শ্রান্ত-ক্লান্ত, নিঃস্ব-রিক্ত যারা, সমাজের কাছ থেকে যারা পেয়েছে শুধু অবহেলা ও ঘৃণা, সেই সমস্ত পতিত, অসহায় মানুষের জন্য তাঁর করুণা শতধারে বয়। ঈশ্বরপুত্র যীশু থেকে শুরু করে মহম্মদ, বুদ্ধ, কৃষ্ণ, চৈতন্য ও বর্তমান যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে পতিতের প্রতি এই করুণা ও পতিতোদ্ধারের অজস্র ঘটনা আমরা জানি। তাই তো অবতারের আরেক নাম ‘পতিত-পাবন’। অবতারের সঙ্গে যুগে যুগে আসেন তাঁর লীলাসহচরগণ—তাঁরাও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নন। শ্রীরামকৃষ্ণ পূত-গঙ্গার দুই ধারা—তাঁর প্রধান বার্তাবহ, চাপরাশ প্রাপ্ত ‘নরেন’ তথা বিশ্ববিজয়ী স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র, কৃষ্ণসখা ‘রাখাল’ তথা স্বামী ব্রহ্মানন্দের জীবনেও একই করুণার প্রতিফলন দেখতে পাই। যেন ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গমঞ্চে অভিনীত তিনটি নাটক—নাটকের প্রথম অংক রচিত হয়েছিল বিডন স্ট্রীটে, নাটক ‘চৈতন্য-লীলা’ ও কৃপাধন্য অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসী; দ্বিতীয় অংকের স্থান প্যারিস, নাটক ‘কারমেন’, আশিস-ধন্যা অভিনেত্রী এমা কালভে; তৃতীয় অংক স্টার থিয়েটারে, আশিস-ধন্যা অভিনেত্রী তারাসুন্দরী! সেই উদারতা, সেই করুণা-নির্ঝর তিন আধারে প্রকাশিত; সন্তানশোকে তাপিত, সমাজের চোখে নিন্দিত তিনজন নারীর জীবনে বর্ষিত!

ঘটনাগুলির স্থান-কাল ভিন্ন, কিন্তু যন্ত্রণাক্লিষ্ট এই তিনজন নারীর জীবন মহামানবের সংস্পর্শে এসে একইভাবে করুণা ও শান্তির অমৃতবারিতে অভিসিঞ্চিত হয়েছিল, যন্ত্রণা ভুলে তাঁরা পেয়েছিলেন আনন্দের সন্ধান— একজন নটী বিনোদিনী, আরেকজন এমা কালভে, অন্যজন তারাসুন্দরী। তাঁরা তিনজনই থিয়েটারের অভিনেত্রী ও সুগায়িকা। এমার জন্ম ফরাসি দেশে, অন্য দুইজনের এই বঙ্গদেশে।

Madame Calve

আত্মহনন থেকে নবজীবনের পথে ফিরলেন এমা কালভে

বিখ্যাত ফরাসী গায়িকা ও মঞ্চাভিনেত্রী—এমা কালভে। আমেরিকা ও ইউরোপের নামকরা শহরগুলোতে তাঁকে একডাকে সবাই চেনে। কিন্তু খ্যাতির একান্ত দোসর নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব। মানুষ স্বীয় প্রতিভাবলে খ্যাতির যত শীর্ষে ওঠে, ব্যক্তিগত জীবনে সে ততই একলা হতে থাকে। তারকার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি মানুষের কৌতূহল থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু তারকাও ব্যক্তিগত জীবনের সুখদুঃখ প্রচারের আলোর আড়ালে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেন—তাঁর তারকাসুলভ ভাবমূর্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই এই গোপনীয়তার পর্দা রাখার বিষম দায়! এমা কালভের জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। আগুনের মতো প্রতিভা, অসামান্য রূপ, সঙ্গীত ও অভিনয় ক্ষমতা তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিলেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল অসহনীয় যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট। যদিও কোথাও তিনি তাঁর যন্ত্রণার খোলাখুলি প্রকাশ করেননি। তবুও একটি বেদনা তাঁর জীবনটাকে এনে দিল একেবারে মৃত্যুখাদের কিনারায়।

সালটা ১৮৯৪। স্থান আমেরিকার শিকাগো শহর। ১৮৯৩ সালের বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর তিনি এখন আমেরিকার গুণী মহলে সুপরিচিত। এমা কালভেও তাঁর নাম শুনেছেন, এও শুনেছেন, এই ভারতীয় যোগীর নাকি অশান্ত মন শান্ত করে দেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। কিন্তু এমা ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা। তিনি কখনও চাননি, কেউ তাঁর উপর সম্মোহন বিদ্যা প্রয়োগ করুক। তাই বন্ধুদের কাছে স্বামীজী সম্বন্ধে অনেক কিছু শোনা সত্বেও তাঁকে দর্শন করার আগ্রহ বোধ করেননি।

ঐ বছর এমা মেট্রোপলিটান অপেরা কোম্পানির হয়ে অভিনয় করছেন শিকাগোতে। প্রত্যেকটি শো সফল ভাবে চলছে। এরই মধ্যে একদিন এক অদ্ভুত ভয় ও নৈরাশ্যের ভাব এমাকে গ্রাস করল। তিনি অনুভব করছিলেন, তাঁর দেহে-মনে অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার মতো একবিন্দু শক্তি অবশিষ্ট নেই। অপেরা ম্যানেজারকে তিনি সেকথা জানালেন এবং সেদিনকার মতো শো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু ম্যানেজার নানাভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এমাকে পরবর্তী অংশে অভিনয়ের জন্য রাজী করালেন। দ্বিতীয় অঙ্কের শেষে এমা প্রায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। যদিও দর্শকরা কিছুই বুঝতে পারেনি এবং করতালিতে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হয়ে উঠেছিল, কিন্তু এমা তাঁর অপারগতা জানালেন এবং শীঘ্র ঘরে ফিরে যাবেন স্থির করলেন। তবুও অপেরা ম্যানেজার নাছোড়বান্দা। তিনি নাটক সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এমাকে দিয়ে অভিনয় করিয়েই ছাড়লেন। সেদিন বুঝি তাঁর অভিনয় প্রতিভার সেরাটুকু এমা নিংড়ে দিয়েছিলেন এবং অভিনয় শেষে দর্শকদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে যখন কোনওরকমে টলতে টলতে নিজের সাজঘরে এলেন, দেখলেন তাঁর কয়েকজন সহকারী পাথরের মতো মুখ নিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে কোন সাঙ্ঘাতিক সংবাদ দেওয়ার অপেক্ষায়। এমা জানতে পারলেন, তাঁর একমাত্র কন্যা, তাঁর শূন্য নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র স্নেহের অবলম্বন ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে এবং বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। যে মুহূর্তে তিনি দর্শকদের কাছে নিজের প্রতিভা উজাড় করে দিচ্ছেন, সেই মুহূর্তে তাঁর অজান্তে তাঁর কাছ থেকে চিরবিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তাঁর প্রাণাধিক কন্যা! এর থেকে বড় ট্র্যাজেডি আর কি হতে পারে! অভিনয়ের ধকলে সমস্ত স্নায়ুগুলো ছিল শ্রান্ত, ফলে সেই নিদারুণ সংবাদ শোনামাত্রই তিনি জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন।

সেদিন রাত্রে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হল। তীব্র শোকের বেগ এমার পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠল। অভিনয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি, বিবাহবিচ্ছেদ আগেই হয়েছিল, এখন স্নেহের দুলালী কন্যাও চিরবিদায় নিল, এমা জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন এবং দিবারাত্রি আত্মহত্যার কথা ভাবতে আরম্ভ করলেন। কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী বন্ধুর নিরন্তর অনুরোধে তিনি স্থির করলেন একবার এই ভারতীয় যোগীর সঙ্গে দেখা করবেন। স্বামীজী তখন হেল পরিবারের অতিথি হয়ে শিকাগোতে রয়েছেন।

আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রায় বার তিনেক তিনি স্বামীজীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করে ঘর থেকে বেরিয়েছেন, অথচ হেল-দের গৃহে না গিয়ে জলে ডুবে মরবার জন্য লেকের ধারে চলে গেছেন। আবার স্বপ্নাবিষ্টের মতো ঘরে ফিরে এসেছেন। এইরকম পর পর তিন-চার বার হওয়ার পরে চতুর্থ কিম্বা পঞ্চম বার তিনি একপ্রকার আচ্ছন্নের মতো যন্ত্রচালিতবৎ উপস্থিত হলেন হেল-গৃহে। তিনি বাইরে বসেছিলেন, একসময় ভিতর থেকে একটি স্বর ভেসে এল, ‘ভয় নেই, ভিতরে চলে এসো।’ তিনি আবিষ্টের মতো ঘরের ভিতর প্রবেশ করলেন। স্বামীজীর সঙ্গে তাঁর সেই প্রথম সাক্ষাতের দিনটির কথা তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন। এক শিল্পীর দৃষ্টিতে খুঁটিনাটি বর্ণনা দিয়েছেন। পাঠক সেই দৃশ্য ছবির মতো মানসচক্ষে দেখতে পান। টেবল-ল্যাম্প জ্বেলে স্বামীজী একটি বই পড়ছিলেন, তাঁর দৃষ্টি নত ছিল, তাঁর গৈরিক আলখাল্লার এক প্রান্ত মাটি স্পর্শ করেছিল, এমার দৃষ্টিতে তাঁর সেই নীরব মগ্ন ভাবের মধ্যে রাজকীয় এক মহিমা ফুটে উঠেছিল। এক সময় স্তব্ধতার অবসান ঘটিয়ে স্বামীজী কথা বললেন, গভীর তাঁর কণ্ঠস্বর, এমার দিকে না তাকিয়েই তিনি বললেন, “তোমার মনের ভিতরে কী ঝড়ই না বয়ে চলেছে! শান্ত হওয়া প্রয়োজন, শান্ত হও।”

প্রথম বাক্যেই এমার সমস্ত সত্তায় আলোড়ন সৃষ্টি হল, এ কার কাছে তিনি এসেছেন! তাঁকে আরও অবাক করে দিয়ে স্বামীজী নিতান্ত স্বাভাবিক স্বরে, প্রায় উদাসীন ভাবে একের পর এক বলে যেতে লাগলেন এমার জীবনের গভীর গোপন যন্ত্রণা, উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথাগুলি, যে সমস্ত কথা এমা তাঁর অতি নিকট আত্মীয়কেও বলেননি। প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন এমা, “আপনি এসমস্ত কথা কী ভাবে জানলেন? কে আপনাকে এসব বলেছে?”

এবার স্বামীজী সরাসরি তাকালেন এমার চোখের দিকে, তাঁর মুখে ফুটে উঠল স্মিত হাসি, যেন নিতান্ত এক শিশুর প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, এমন ভাবে বললেন, “কেউ আমাকে কিছুই বলেনি। তার কি কোনও প্রয়োজন আছে? আমি খোলা বইয়ের মতোই তোমার মনটিকে পড়তে পারছি।”

সেদিন তিনি আরও কিছু বলেছিলেন। অবশেষে বিদায় নেওয়ার সময় এলো, এমা উঠে দাঁড়ালেন, স্বামীজী তাঁকে বললেন, “তোমাকে এসমস্ত ভুলতে হবে। আবার আগের মতো হাসিখুশি হয়ে ওঠ। শরীরের যত্ন নাও। নিজের দুঃখ নিয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে থেকো না, বরং তোমার ভিতরের যন্ত্রণা, তোমার আবেগ-অনুভূতিগুলোকে বাইরে বেরিয়ে আসবার পথ করে দাও, শিল্পের অভিব্যক্তির মাধ্যমে তাদের প্রকাশ কর, এটাই তোমার শিল্পের দাবী, এবং তোমার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যেও তা প্রয়োজন।”

স্বামীজীর কাছে যে এমা এসেছিলেন, তিনি আর ফিরলেন না। ফিরে গেলেন এক নতুন প্রাণস্পন্দনে উজ্জীবিত এমা, আবার আগের মতো হাসিখুশি, উচ্ছ্বল, প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণা।

প্রথম দিনের আলাপেই স্বামীজীকে তাঁর হৃদয়ের দেবতার আসনটিতে বসিয়ে দিলেন এমা কালভে —স্বামীজী স্পর্শ করেছিলেন তাঁর মনের নিভৃত কুঠুরিতে সঞ্চিত একান্ত ব্যক্তিগত বেদনা-পুঞ্জ—বাঁধভাঙা অশ্রুর উৎসারে তাঁর দুঃখের অনল ধুইয়ে স্বামীজী আবার কালভের শিল্পীসত্তার অভিষেক ঘটিয়েছিলেন। আমেরিকায় তিনি এমার অভিনয় (প্রিমা দোনা) দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। প্যারিসে মিসেস লেগেটের আমন্ত্রণে সঙ্গীতানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমাকে জানালেন তাঁর ইচ্ছের কথা—বললেন, ‘তোমাকে তোমার প্রিয় চরিত্রে অভিনয় করতে দেখতে চাই’। এমা এখন স্বামীজীকে ‘মঁ পেরে’ বলেন, ফরাসী ভাষায় যার অর্থ ‘আমার বাবা’। তাই ‘পিতা’-র ইচ্ছার কথা শুনে উত্তর দিতে লজ্জায় রাঙা হল মেয়ের মুখ, বললেন, “সেটি ‘কারমেন’-এর চরিত্র, কিন্তু স্বামীজী, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, সে এক মন্দমেয়ের কাহিনী, আর প্রতি রাত্রে যখন আমি ‘কারমেন’ হয়ে নাচি, গাই, আমি ঐ মেয়েটাই হয়ে যাই!” নিবেদিতার আপত্তি সত্ত্বেও স্বামীজী হাজির হলেন ‘কারমেন’ শো দেখতে এবং শো-এর বিরতি পর্বে সোজা চলে গেলেন এমা-র সাজঘরে। অপ্রস্তুত এমা-কে বাকরুদ্ধ করে তাঁর ‘পিতা’ বললেন, “এমা, তোমার ‘কারমেন’ দেখার ইচ্ছে ছিল, মেয়েটিকে মন্দ ভেবো না, সে বড় খাঁটি! সে মিথ্যা বলে না। ভয়ংকর উগ্রতার মধ্যে দিয়ে সে তাঁর হৃদয়টিকেই মেলে ধরে, সকলের প্রার্থনার শেষে যে জগজ্জননীকে বলে, “মা গো! আমার প্রার্থনা পূরণ কোর না! বাসনার নিবৃত্তি আমি চাই না—আমার কামনার আগুন যেন আমায় পুড়িয়ে শেষ করে—এই সাধ!”

এই ঘটনার প্রায় এক দশক আগের কথা—ইংরেজি ১৮৮৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বঙ্গরঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে তখন গিরিশচন্দ্রের ‘চৈতন্যলীলা’ নাটক অভিনীত হচ্ছে। নাটকের প্রশংসা শুনেই শ্রীরামকৃষ্ণ স-শিষ্য নাটক দেখতে এলেন সেদিন স্টার থিয়েটারে। এক সময় অভিনয় শেষ হলো। ভাবাবিষ্ট শ্রীরামকৃষ্ণ অফিসঘরে এসে বসলেন। চৈতন্যের ভূমিকাভিনেত্রী বিনোদিনী দাসী লিখেছেনঃ “অভিনয়কার্য শেষ হইলে আমি শ্রীচরণ দর্শন জন্য যখন অফিসঘরে তাঁহার চরণ-সমীপে উপস্থিত হইলাম, তিনি প্রসন্ন বদনে উঠিয়া নাচিতে নাচিতে বলিলেন, ‘হরি গুরু গুরু হরি’, বল মা ‘হরি গুরু গুরু হরি’, তাহার পর উভয় হস্ত আমার মাথার উপর দিয়া আমার পাপ-দেহকে পবিত্র করিয়া বলিলেন যে, ‘মা, তোমার চৈতন্য হউক!’ তাঁর সেই সুন্দর প্রসন্ন ক্ষমাময় মূর্তি আমার ন্যায় অধম জনের প্রতি কি করুণাময় দৃষ্টি! পাতকীতারণ পতিতপাবন যেন আমার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আমায় অভয় দিয়াছিলেন!”১

Tara Sundari

তারাসুন্দরীর ভাগ্য

শ্রীরামকৃষ্ণ-সহধর্মিণী, তাঁর প্রকৃত লীলাসহচরী শ্রীমাও একই ভাবে আশিসদানে ধন্য করছেন রঙ্গালয়ের অভিনেত্রীদের। তদানীন্তন বঙ্গসমাজে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ বংশীয়া বিধবা থিয়েটারে দেখতে রঙ্গালয়ে গিয়েছেন—এটি যুগপৎ বিস্ময়কর ও আধুনিক উদারমনস্কতার পরিচায়ক।

এই প্রসঙ্গে শ্রীসারদামঠের প্রথম সঙ্ঘাধ্যক্ষা ভারতীপ্রাণা মাতাজীর স্মৃতিচারণ অবলম্বনে একটি ঘটনা স্মরণযোগ্য। তখন অপরেশবাবু মিনার্ভা থিয়েটারে, গিরিশচন্দ্র রচিত ‘রামানুজ’ নাটকের অভনয় চলছে। মায়ের ভক্ত ললিতবাবুর বন্ধু অপরেশবাবু, উভয়ের ইচ্ছায় মা সঙ্গিনীসহ থিয়েটার দেখতে যেতে সম্মত হলেন। নলিনী, মাকু, রাধু, মন্মথ, নবাসনের বউ, গোলাপ-মা ও সাধুরা অনেকেই গেলেন। ঐ নাটকের একটি দৃশ্যে রামানুজকে তাঁর গুরু দীক্ষাদানের পর বললেন, “এই মন্ত্র তুমি কাউকে বলবে না। যে এই মন্ত্র শুনবে, সে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু তোমাকে নরক ভোগ করতে হবে।” মহাপ্রাণ রামানুজ একথা শুনেও লোককল্যাণ কামনায় উচ্চস্বরে সেই সিদ্ধমন্ত্র সকলকে শুনাতে লাগলেন। ঐ দৃশ্যটি দেখতে দেখতে শ্রীমা একেবারে সমাধিস্থা হলেন। রামানুজের ভূমিকায় তারাসুন্দরী অভিনয় করছিলেন। ঐ দৃশ্যের পরে তিনি মা-কে প্রণাম করতে এলেন। কিন্তু মা তখন একেবারে বাহ্যজ্ঞানশূন্যা—গোলাপ-মা মাকে কয়েকবার জোরে জোরে ডাকার পর তাঁর কিঞ্চিৎ বাহ্যজ্ঞান এলে তারাসুন্দরী তাঁকে প্রণাম করলেন। শ্রীমা কিন্তু তারাকে প্রকৃত রামানুজ জ্ঞানে কোলে বসিয়ে চুম্বন করলেন। গোলাপ-মা বলতে লাগলেন, ‘আহা, তারার কি ভাগ্য, তারার কি ভাগ্য!’২

স্বামী ব্রহ্মানন্দের কৃপাধন্য তারাসুন্দরীর কথা

তারাসুন্দরী সেযুগের বাংলা রঙ্গমঞ্চের সম্রাজ্ঞী ছিলেন বললেও অত্যুক্তি হয় না। ১৮৭৯ সালে উত্তর কলকাতার এক পতিতাপল্লীতে তাঁর জন্ম, নৃত্যকালী ও তারাসুন্দরী—দুই মেয়েকে নিয়ে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন অতি সামান্য এক থিয়েটার আর্টিস্ট, তারার মা। বিনোদিনীর মা ছিলেন তাঁর সই। সেই সূত্রে তিনি বিনোদকে দিয়ে তারাকে থিয়েটারে ‘অ্যাক্টো’ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সইকে অনুরোধ করেন। তারার মুখখানি ছিল ফুটফুটে, নিষ্পাপ। কলকাতার প্রখ্যাত ধনী গোপাললাল শীল সেই সময় স্টার থিয়েটার কিনে নেন এবং নূতন ভাবে সাজিয়ে নাম দেন ‘এমারেল্ড থিয়েটার’। এখানেই গিরিশচন্দ্রের ‘চৈতন্যলীলা’ নাটকে মাত্র ছয় বছর বয়সে সংলাপ হীন এক বালকের চরিত্রে তারার প্রথম অভিনয়। এরপর ১৮৮৮ সালে স্টার থিয়েটার হাতিবাগানে চলে আসে এবং ২৫শে মে গিরিশবাবুর ‘নসীরাম’ নাটক দিয়ে উদ্বোধন হয়। তখন তারার বয়স নয় এবং ঐ নাটকে সে এক আদিবাসী বালকের পার্ট পেয়েছে। তাতে সংলাপ খুবই কম, কিন্তু তার স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় আর সুন্দর মুখ দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে। এর মধ্যে একদিন গিরিশ বাবু থিয়েটারে এলেন এবং এসেই শ্রীরামকৃষ্ণের ছবির সামনে মুদিত নয়নে অঞ্জলীবদ্ধ হয়ে প্রণত হলেন। সেই সময়, বাংলার সব থিয়েটারেই শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি থাকত। ছোট্ট তারাও এই সুযোগে গিরিশের দেখাদেখি একই ভঙ্গীতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ঠাকুরের ছবিতে প্রণাম জানালো। চোখ খুলে ছোট্ট বালিকাকে ভক্তিভরে প্রণাম করতে দেখে গিরিশ হেসে বললেন, “তুই কে?’

“আমি তারা!’ ছোট্ট মেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ভাবে আত্মপরিচয় দিল।

“ও, তুইই গোপালের পার্ট করিস?”
হাসিমুখে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তারা।

গিরিশ সস্নেহে তারার মাথায় হাত রেখে বললেন, “অমৃত (স্টেজ ডিরেক্টর), মেয়েটার দিকে খেয়াল রেখ, কালে এ মেয়ে খুব নাম করবে, এ আমি তোমায় বলে দিলুম”। রতনে রতন চেনে, প্রবীণ অভিনেতা ভাবী অভিনেত্রীকে চিনতে ভুল করেন নি—তাঁর আশীর্বাণী সত্য হয়েছিল।

বিনোদিনীর বয়স বাড়ছিল। তার শূন্যস্থানে নূতন তারকা হিসাবে থিয়েটার জগতে উদিত হল তারাসুন্দরী। ‘চৈতন্যলীলা’র চৈতন্য, ‘নল-দময়ন্তী’র দময়ন্তী, ‘বুদ্ধদেব-চরিত’-এর গোপার চরিত্র—যেগুলো সবই একচেটিয়া ছিল বিনোদিনীর এক্তিয়ারে, সেইসব চরিত্রে এখন দেখা যেতে লাগল কিশোরী তারাসুন্দরীকে। খুব শীঘ্রই তাঁর প্রতিভা তাঁকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। তাঁকে অভিনয়ে তালিম দিয়েছিলেন অমৃতলাল মিত্র, গানে ও নাচে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন যথাক্রমে রামরতন সান্যাল ও কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তারা রীতিমত প্রতিষ্ঠিতা। যৌবনের অসামান্য রূপলাবণ্য, প্রচুর অর্থ, খ্যাতি—এই ত্র্যহস্পর্শ এক অভিভাবকহীনা সদ্যযৌবনা তরুণী-শিল্পীর পক্ষে ভয়ানক। ১৮৯৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসের অমৃতলাল বসু কৃত নাট্যরূপে মুখ্য নায়িকা শৈবালিনীর চরিত্রে অভিনয় করে তারাসুন্দরী রাতারাতি ‘তারকা’ হয়ে উঠল এবং মাত্র তিনদিন নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পরই, অমরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে এক ধনী ব্যক্তি অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে তারাকে রক্ষিতা করে নিয়ে তুলল তার কলকাতার উপকণ্ঠে বাগমারি অঞ্চলের বাগান বাড়িতে।

অমরেন্দ্র এমারেল্ড থিয়েটার লীজ নিয়ে নাম পরিবর্তন করেন ‘ক্লাসিক থিয়েট্রিকাল কোম্পানি’। ১৮৯৭ সালের ১৬ই এপ্রিল গিরিশের ‘নল-দময়ন্তী’ পালা দিয়ে তার উদ্বোধন হয়। তারার অভিনয় জীবন শুরু হল নতুন উদ্যমে। শুরু হল নূতন প্রেমিক অমরেন্দ্রর সঙ্গে পথ চলা—একের পর এক মঞ্চস্থ হতে লাগল হারানিধি, তরুবালা, বিল্বমঙ্গল ঠাকুর, দেবী চৌধুরাণী ও অন্যান্য বহু পালা। কিন্তু শীঘ্রই তারার সুখের পথে কাঁটা উপস্থিত হল। কুসুমকুমারী নামে এক নূতন অভিনেত্রী অমরেন্দ্রর চিত্তজয় করল। ভালবাসার মানুষের প্রতারণায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিমানে তারা অমরেন্দ্রর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে যোগ দিল আবার স্টার থিয়েটারে, ৩২ টাকা মাস মাইনের কর্মী হিসেবে।

নটীর জীবনে পুরুষ সঙ্গী আসে বেশ বদলানোর মত। তারার শূন্য জীবনেও আবার নূতন প্রেমের অংকুর দেখা দিল। ১৯০৪ সালে এক সুদর্শন, তরুণ অভিনেতা অপরেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়লেন তারাসুন্দরী—তখন তার বয়স ২৫ বছর। অপরেশের সঙ্গে প্রায় ২০ বছর এক স্থায়ী সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন তারা। ১৯০৮ সালে তাদের প্রথম পুত্র সন্তান নির্মল, ও ১৯১৫ সালে মেয়ে প্রতিভার জন্ম হয়। ছেলে নির্মল ছিল তারার চোখের মণি। নিজের কলংকিত জীবনের ছায়াও যেন ছেলের উপর না পড়ে, তাই নাম রাখেন নির্মল। বড় যত্নে অপরেশও তাকে ভাবী উত্তরসূরী রূপে তালিম দিতে থাকেন।

নাম-যশ, টাকা-পয়সা সব থাকা সত্বেও তারা অন্তরে শূন্যতা অনুভব করতেন। তিনি নিজে তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “বাপ কি বস্তু, কখনও জানিনি, শুনেছি আমি যখন মায়ের গর্ভে, তখন বাপ মারা যান।” অসহায়া বিধবা, পিতৃহারা শিশুকন্যাকে নিয়ে কত না দুঃখকষ্ট ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে—সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না, তারার নিজের কথায়, “না বন্ধু, না পিতা, না আত্মীয়—এত বড় সংসারটা—এ যেন একটা পরের বাড়ি। স্বার্থ ভিন্ন কেউ কথা কয় না, ফিরেও চায় না—জগতে আপনার বলতে কেউ নেই।”

অভিনেত্রী তারার খ্যাতি ও বৈভব প্রেম-ভিখারিনী, ভক্ত-তারাকে আড়াল করে রেখেছিল। যতই বয়স বাড়ছিল, ততই জগতের অসারতা তার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। তার প্রাণ ব্যাকুল হয়েছিল নিত্য, শাশ্বত বস্তুর সন্ধানে। সে শুনতে পাচ্ছিল তার নিভৃত সত্তার আহ্বান। একদিন পালা শেষ হওয়ার পরে সব কলাকুশলীরা গিরিশের ঘরে বসে কথা বলছিল। গিরিশ তাদের রামকৃষ্ণের কথা শোনাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনকড়ি গিরিশকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, আমি তো জীবনে কত পাপ করেছি, তিনি কি আমাকেও কৃপা করবেন?”

উত্তর গিরিশ বলেন, “তাঁর অবারিত দ্বার, সেখানে ধনী-দরিদ্র ভেদ নেই। তাঁর কাছে সকলেই সমান, সব্বার প্রার্থনা তিনি শোনেন—তাই তো তিনি ভগবান! লক্ষহীরার কথা শোননি? সে গিয়েছিল যবন হরিদাসকে নষ্ট করতে, ভগবানের কৃপায় সেই বাঈজী হয়ে গেল সাধিকা তুলসীদাসী! তাঁর কৃপায় সবই সম্ভব।” তাঁর কথা শুনে তারাসুন্দরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “যে পাপের জীবন আমাদের, এর থেকে আমাদের মুক্তি নেই!” গিরিশ বলেন, “এমন কথা বলতে নেই তারা! শুনিসনি বিনোদের কথা? তার চৈতন্যের পার্ট দেখে ঠাকুর খুশি হয়ে তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, ‘মা, তোমার চৈতন্য হোক’। তিনি পতিত পাবন। এমনকি বেশ্যাদেরও তিনি তাঁর চরণে আশ্রয় দেন।” সেই থেকে তারাসুন্দরী মনে মনে ঠাকুরের শরণ নিয়েছিল। কিন্তু ঠাকুর যেমন বলতেন, “সময় না হলে পাখী ডিম ফুটোয় না”—তারার জীবনেও সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল সাত বছর পরে।

স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, ছেলেবেলা থেকেই নটগুরু গিরিশচন্দ্রের অধীনে অধিকাংশ সময়ে কাজ করেছেন এবং তাঁর মুখে শ্রীশ্রীপরমহংসদেবের কথা শুনতেন। সেইসমস্ত থিয়েটারে শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি থাকত এবং গিরিশবাবুর প্রশিক্ষণে প্রত্যেক কলাকুশলী স্টেজে যাওয়ার আগে তাঁর ছবিতে প্রণাম করতেন। এইভাবে ক্রমে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি শ্রদ্ধা ও বেলুড়মঠে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তারার মনে। একবার উৎসব উপলক্ষে মঠে যাওয়ার অনুমতি চাইলে গিরিশ বাবু বলেছিলেন, “এখন নয়, ঠাকুরের যদি ইচ্ছা হয়, পরে যেও।” এরপর ব্যক্তিগত জীবনের টালমাটাল অবস্থায় মনে যখন খুব অশান্তি, কিছুই ভাল লাগত না, নানা তীর্থে ঘুরে বেড়াতেন, এমনই এক সময়ে (১৯১৬ সালে) যিনি প্রথম হাত ধরে রঙ্গালয়ে এনেছিলেন, সেই বিনোদিনীই তাঁকে সঙ্গে করে মঠে নিয়ে আসেন।

এই তাঁর প্রথম পুণ্যধামে প্রবেশ। স্বামী ব্রহ্মানন্দের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের মুহুর্তটি নিজেই লিখেছেন, “যখন মঠে গেলাম, তখন প্রায় দুপুর উত্তীর্ণ হইয়াছে—মহারাজ সেবা-অন্তে বিশ্রাম করিতে যাইবেন—আমরা উভয়ে প্রণাম করিলাম। মহারাজ দেখিয়াই বলিলেন, “এই যে বিনোদ, এই যে তারা—এসো এসো, এত বেলা করে এলে—মঠের খাওয়া দাওয়া যে হয়ে গেছে—আগে একটু খবর দিতে হয়, তাইতো—বস বস।”

মহারাজের আদেশে তাঁদের জন্য অবেলায় লুচি ভাজাবার বন্দোবস্ত হল। ‘আসো না কেন’—এই প্রশ্নের উত্তরে তারা যখন বললেন, নিজেদের অপবিত্র বোধ হওয়ায় মঠে আসতে ভয় হয়, তিনি বললেন, “ঠাকুরের কাছে আসবে, তার আর ভয় কি? আমরা সকলেই তো ঠাকুরের ছেলেমেয়ে। যখন ইচ্ছা হবে এসো মা! তিনি তো খোলটা দেখেন না, ভিতরটা দেখেন!” বিকেলে চা-পানের পর বিদায় নিতে গেলে মহারাজ মাঝে মাঝে আসতে বললেন, প্রসাদ না পাওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বললেন, “আরেকদিন এসে ভাল করে প্রসাদ পেয়ে যেও!” তাঁর স্নেহে-যত্নে-আন্তরিক ব্যবহারে তারার ভয়-সঙ্কোচ কোথায় মিলিয়ে গেল। স্মৃতিকথায় রয়েছে অকপট স্বীকারোক্তি—“এই আমার প্রথম দর্শন—এই আমার প্রথম বন্ধন।”

এরপর ‘রামানুজ’ দেখতে মহারাজও রঙ্গালয়ে গিয়েছিলেন এবং তারা প্রণাম করে তাঁর পদধূলি গ্রহণ করলে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, “বেশ! বেশ! খুব ভক্তি বৃদ্ধি হোক!”

কিন্তু মনের জ্বালা মিটল না তবুও। আগেরই মত তারা ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন। অন্তরের জ্বালায় পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এমারই মত। যেন কোথাও আশ্রয় নেই, জুড়োবার স্থান নেই, সব শূন্য বোধ হচ্ছে। জগন্নাথ দর্শনে যাত্রা করলেন। পথে ভুবনেশ্বরে ধর্মশালায় উঠেছেন, শুনলেন, ভুবনেশ্বর মঠে রয়েছেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ। গেলেন তাঁর দর্শনে। মহারাজের সেই আদর, সেই যত্ন, সেই আগ্রহ। কোথায় বসাবেন, কী খাওয়াবেন যেন ভেবে পাচ্ছেন না। “মুখখানা শুকিয়ে গেছে। রোদ্দুরে বেরুলে কেন? … কোথায় খাও? কাল থেকে মঠ থেকেই প্রসাদ যাবে। কি খেতে ভালবাস? আমরা মা সাধু সন্ন্যাসী ফকির—কি বা এখানে পাওয়া যায়!” মহারাজের এই স্নেহপূর্ণ কথাগুলি শুনতে শুনতে তারাসুন্দরী ভাবছিলেন, “…কে আমি? সমাজের কোন স্তরে আমার স্থান? কত কত নিম্নে! ঘৃণা ও অবজ্ঞা ছাড়া জগতের কাছে প্রাপ্য আর কিছুই নেই—না বন্ধু, না পিতা, না আত্মীয়—এত বড় সংসারটা—এ যেন একটা পরের বাড়ি। স্বার্থ ভিন্ন কেউ কথা কয় না, ফিরেও চায় না—জগতে আপনার বলতে কেউ নাই। আজ স্বামী ব্রহ্মানন্দ—শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মানসপুত্র, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, সর্বপূজ্য, সর্বমান্য মহারাজ কি আকুল আগ্রহে, কি অকৃত্রিম স্নেহে, কি অপ্রত্যাশিত যত্নে আমাকে আপনার করিয়া লইলেন! বাপকে কখনও দেখি নাই—শুনিয়াছি যখন আমি মাতৃগর্ভে তখন বাবা মারা যান। মনে হইল, এই কি বাপের স্নেহ, না এ তার চেয়েও বেশী আর কিছু? সারা জীবনের আক্ষেপ যেন অশ্রুধারার সঙ্গে সঙ্গে গলিয়া মাটিতে পড়িতে লাগল! মনে হইল, এই তো জুড়াবার স্থান, এই তো এমন একজন দরদী আছেন, যার কাছে আমি পতিতা নই, অস্পৃশ্যা নই, ঘৃণিতা নই! মহারাজের মেয়ে আমি। যার কেউ নাই, তার আপনার জন! ঐ আমার মহারাজ, ঐ আমার পিতা, আমার স্বর্গ, আমার শান্তি, আমার ভগবান!”

১৯২২ সালে মহারাজের মহাসমাধির পর তারা থিয়েটার জীবন থেকে সরে আসেন। এরপর (১৯২৪) বড় ছেলে নির্মলের আকস্মিক মৃত্যুতে দারুণ মানসিক আঘাতে তারাসুন্দরী একেবারে ভেঙে পড়েন।

শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র স্বামী ব্রহ্মানন্দের স্নেহ পেয়েছেন তারা, পেয়েছেন স্বয়ং জগন্মাতা শ্রীসারদাদেবীর আশীর্বাদ। বেলুড়মঠে এসে স্বামী ব্রহ্মানন্দের অভাববোধে তাঁকে কাঁদতে দেখে স্বামী শিবানন্দ সান্ত্বনা দেন এবং গুরুর নামে তাঁকে মন্দির প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন। ভুবনেশ্বরে জমি কিনে আশ্রমের আদলে একটি বাড়ি করেন তারাসুন্দরী, একটি ছোট গোপাল মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নাম দেন ‘রাখাল কুঞ্জ’, সেখানেই সাধনভজনে সময় কাটাতেন এবং ঈশ্বরপরায়ণ, অন্তর্মুখ জীবনযাপন করতেন। অপরেশের সঙ্গেও সম্পর্ক আলগা হয়ে গিয়েছিল। কাছে থাকতেন মেয়ে প্রতিভা। শিবানন্দ মহারাজ স্বয়ং ভুবনেশ্বরে এসে ‘রাখাল কুঞ্জ’ উদবোধন করেছিলেন এবং পরে স্বামী সুবোধানন্দ রাখাল মহারাজের (স্বামী ব্রহ্মানন্দের) অস্থিভস্ম এনে মন্দিরের পূজাবেদীতে স্থাপন করেন। স্বামী অখণ্ডানন্দের আদেশে শ্রীরামকৃষ্ণকে অন্নভোগ নিবেদনের আকাঙ্ক্ষাও পূর্ণ হয় তারার। রাখাল কুঞ্জে তারা সাধনা ও ধ্যানে এতই বিভোর থাকতেন যে একদিন পাশের গোয়ালঘরে আগুন লাগলে লোকজনের ডাকাডাকিতেও তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হয়নি। একদিন দ্বিপ্রহরে বৃদ্ধা তারাকে দেখতে এসে স্বামী সুবোধানন্দ কাউকে কোথাও দেখতে না পেয়ে একটি আধ-ভেজানো জানলা দিয়ে উঁকি মেরে লক্ষ্য করেন যে, মন্দিরের বিগ্রহের সামনে তন্ময় হয়ে নৃত্য করছেন তারা। যে নৃত্যকলা দিয়ে তিনি আজীবন মানুষের মনোরঞ্জন করেছেন, তাইই তিনি ভগবৎ চরণে নৈবেদ্য রূপে নিবেদন করছেন। ভক্তির এই অপরূপ মাধুর্য আস্বাদন করে সুবোধানন্দ নীরবে ফিরে যান। মৃত্যুর আগে অসুস্থ তারাকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কন্যা প্রতিভার বক্তব্য অনুসারে মৃত্যুর আগে তিনি মেয়ের মুখে এক অধ্যায় গীতা পাঠ শোনেন এবং ‘রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিতপাবন সীতারাম’ এই গানটি শুনতে শুনতে শ্রীরামকৃষ্ণের ফটোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে প্রশান্তবদনে হাসিমুখে জীবন-রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।

Binodini Dashi

শ্রীরামকৃষ্ণ-কৃপাধন্য বিনোদিনীর শেষজীবন

বিনোদিনীর স্বরচিত আত্মজীবনীতে পাই, ‘চৈতন্যলীলা’য় অভিনয়ের সময় “হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়” গাইতে গাইতে উচ্ছ্বসিত দর্শকের করতালির সঙ্গে সঙ্গে তরুণী বিনোদিনী ভাবোচ্ছ্বাসে প্রায় অচেতন হয়ে পড়তেন। চরিত্রের সঙ্গে অত্যধিক একাত্মতা ছিল তাঁর মজ্জাগত। যে কোনও খাঁটি শিল্পীর এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরেও কিছু কথা আছে। শ্রীরামকৃষ্ণের ভাষায়, “অন্তরে সোনা চাপা আছে, খপর নাই!” জলের তলায় ডুবো চুম্বক পাহাড়ের কাছে যখন জাহাজ আসে, তার সর্বাঙ্গের সমস্ত লোহালক্কড় হুড়মুড় করে খসে পড়তে থাকে। শ্রীরামকৃষ্ণ জিয়নকাঠির স্পর্শে সূক্ষ্ম সংবেদনশীল শিল্পী মনের অন্তঃস্থিত অধ্যাত্মসত্তাটি জাগ্রত হল। তাঁর পরবর্তী জীবনই তার প্রমাণ। একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, “যন্ত্রণা হল সেই স্থান, যে-স্থান দিয়ে ঈশ্বর আমাদের জীবনে প্রবেশ করেন।” বিনোদিনীর জীবনও তার ব্যতিক্রম নয়। তারও একমাত্র কন্যার মৃত্যু হয় (১৯০৩)। মেয়েটি ছিল তাঁর চোখের মণি, নাম রেখেছিলেন শকুন্তলা। তাকে পড়াশুনো শিখিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তার আয়ু ফুরিয়ে গেল। বিনোদিনী থিয়েটার থেকে সরে এলেন। মেয়ের মৃত্যুর শোক ভুলতে গিরিশ বাবুর উপদেশে লিখতে আরম্ভ করলেন আত্মজীবনী, ‘আমার কথা’। ভাব ও ভাষা ছিল তাঁর চমৎকার। লেখালিখির অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল। ৪১ টি কবিতার সঙ্কলন ‘বাসনা’ ও ‘কণক ও নলিনী’ নামে আরও একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন বিনোদিনী। ‘নাট্যমন্দির’ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর অভিনয় জীবনের কথা। বিনোদিনীর মৃত্যুর অনেক পরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নির্মাল্য আচার্য-এর সম্পাদনায় “আমার কথা ও অন্যান্য রচনা” নামে সুবর্ণরেখা প্রকাশনা সংস্থা থেকে বিনোদিনীর সমস্ত লেখা প্রকাশিত হয় (১৯৮৭)। ৩০ বছর ধরে যাঁর আশ্রয়ে ছিলেন, সেই ধনী ব্যবসায়ী বাবুর মৃত্যুর পর বিনোদিনী সম্পূর্ণ ভাবে ঈশ্বর আরাধনায় জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলি উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর বাড়ির নাম ছিল ‘গোপাল কুটির’। তিনতলার উপরে ছিল তাঁর ঠাকুরঘর, সেখানে মাইনে করা পুরোহিত নিযুক্ত করে রাধাকৃষ্ণ, গোপাল ও নারায়ণশিলা নিত্যপূজার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। ঠাকুরঘর ছাড়া নিজের শয়নকক্ষে বিনোদিনী রেখেছিলেন তাঁর ঈশ্বর, শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি। ফুল-চন্দন দিয়ে ছবিখানি নিত্য পূজা করতেন। নিষ্ঠাসহকারে জপধ্যান করতেন ও নিত্য গীতাপাঠ করতেন। মেয়ের মৃত্যুর পর আরেকটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন, তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে অরগান বাজিয়ে গান করতেন। মাঝেসাঝে থিয়েটার দেখতে যেতেন। নবীন কলাকুশলীরা তাঁকে মায়ের মত শ্রদ্ধা করত। বাড়ির কাছেই ছিল রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ। সেখানে স্বামী অভেদানন্দকে দর্শন করতে ও সন্ধ্যা-আরতীতে নিত্য উপস্থিত হতেন তিনি। মন্দিরে ঠাকুরের পটের সামনে তাঁকে অশ্রুবিসর্জন করতেও দেখেছেন অনেকে। পবিত্র ভক্তিভাবে অভিসিঞ্চিত হয়ে অভিনেত্রী নটী বিনোদিনী হয়ে উঠেছিলেন ভক্তিমতি সাধিকা। ১৯৪১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রামকৃষ্ণলোকে যাত্রা করেন।

এমার পরবর্তী জীবন

স্বামীজীর মহাসমাধির অনেক পরে এমা এসেছিলেন পুণ্যভূমি ভারতবর্ষ দর্শনে। মঠের সাধুরা ফুল দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়, ফল দিয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করেন। গঙ্গাতীরে আমগাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় টেবিল পেতে তাঁকে বসতে দেওয়া হয় এবং পায়ের নিচে বয়ে যাওয়া গঙ্গার কুলুকুলু ধ্বনির সঙ্গে স্বামীজীর গুরুভ্রাতাদের গীত সংস্কৃত স্তোত্র (এমার) অজানা যন্ত্রানুসঙ্গের সঙ্গে যে অপরূপ ভাবগম্ভীর মাধুরী সৃষ্টি করেছিল, ধ্যানগম্ভীর সেই প্রশান্ত অপরাহ্ণটি এমার মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী হয়েছিল আমৃত্যু।

পরে নিজের আত্মজীবনীতে এমা লিখেছেন, “স্বামীজীর কথায় ও ব্যক্তিত্বে গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়ে আমি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিলাম (প্রথম সাক্ষাতের পরে)। তিনি বিকারগ্রস্ত প্রলাপের মতো হাবিজাবি জটিল চিন্তাগুলো আমার মাথা থেকে বের করে দিয়ে যেন তাঁর স্বচ্ছ ও শান্ত চিন্তাগুলি সেখানে ভরে দিয়েছিলেন। না, স্বামীজী আমার উপর সাধারণ কোনও যাদু বা সম্মোহনী বিদ্যা প্রয়োগ করেননি। তাঁর প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে ধন্যবাদ যে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া প্রাণোচ্ছল ‘আমি’-কে খুঁজে পেয়েছিলাম। উদ্দেশ্যের প্রতি তাঁর সততা ও চরিত্রের দৃঢ়তা অসাধ্য সাধন করত। আমার বন্ধুদের কাছে পরে শুনেছিলাম, তিনি তাঁর সামনে উপস্থিত ব্যক্তির অশান্ত চিন্তাগুলিকে শান্ত করে একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করে দিতেন, ফলে ওই ব্যক্তি স্বামীজীর প্রত্যেকটি কথা অখণ্ড মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করতে পারত।” স্বামীজীর সঙ্গে এই পরিচয় এমাকে পুনর্জীবন দান করেছিল।

স্বামীজী সম্ভবত এমার অশান্ত মন শান্ত করবার উদ্দেশ্যেই তাঁকে সরল প্রাণায়াম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, এমা যাকে শ্বাস-প্রশ্বাস সম্বন্ধীয় প্রার্থনা (রেসপিরেটরি প্রেয়ার) নামে উল্লেখ করেছেন। স্বামীজী বলতেন, ঈশ্বরের শক্তি বাতাসে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে, শ্বাসের মাধ্যমে সেই শক্তিকে নিজের ভিতরে টেনে নেওয়া সম্ভব।

সন্তানের মৃত্যুশোক যাকে আত্মহননের মানসিকতায় পৌঁছে দিয়েছিল, স্বামীজীর স্নেহ, প্রেম, করুণা ও প্রেরণা তাঁকে সেই নেতিবাচক চিন্তার খাদ থেকে ইতিবাচক শিল্পের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিল। বেলুড় মঠে অতিবাহিত সেই সন্ধ্যার স্মৃতিচারণে তাই তিনি লিখেছিলেন—“The hours that I spent with these gentle philosophers have remained in my memory as a time

apart. These beings, pure, beautiful, and remote, seemed to belong to another universe, a better and wiser world.”

বড়লোক গুণগ্রাহীদের ড্রয়িংরুমে সময় কাটানোর সাদর আমন্ত্রণ সত্ত্বেও জীবনের শেষদিনগুলোয় বেশিরভাগ তিনি স্বেচ্ছায় শিশুদের হাসপাতালে সময় কাটাতেন। তাঁর ঘরের বৈঠকখানায় বিয়োগান্তক নাটকের নায়িকাদের বেশ কিছু তৈলচিত্র সাজানো ছিল। তাদের একটিতে এলেন টেরির একটি মন্তব্য লেখা ছিল, ইংরাজিতে যার অর্থ, ‘আই লাভ ইউ অ্যান্ড দ্যাট ইজ অল’—এটাই শেষপর্যন্ত এমার জীবনদর্শন হয়ে গিয়েছিল।

একই করুণা-নির্ঝর, একই কৃপা-গোমুখ—ত্রিধারায় প্রকাশিত হয়ে, তিন আধারে বিতরিত হয়েছিল!

এই তিন আধার স্বয়ং রামকৃষ্ণ, তাঁর প্রধান বার্তাবহ স্বামী বিবেকানন্দ ও স্বামী ব্রহ্মানন্দ। এই তিন আধার থেকে উৎসারিত কৃপাধারায় অভিসিঞ্চিতা সমাজের চোখে নিন্দিত-চরিত্রের তিন অভিনেত্রী, যথাক্রমে বিনোদিনী, এমা ও তারাসুন্দরী। যুগে যুগে এমন হয়ে এসেছে। আজও এভাবে লোকচক্ষুর আড়ালেও বহু তাপিত জীবন ঈশ্বরের অমোঘ কৃপায় রূপান্তরিত হয়ে চলেছে। স্বামী ব্রহ্মানন্দের ভাষায়—“তিনি তো খোলটা দেখেন না, দেখেন মানুষের ভিতরটা!”

তথ্যঋণ:

(১) Girish Chandra Ghosh: A Bohemian Devotee of Sri Ramakrishna; Swami Chetanananda, Advaita Ashrama (1st Edn. October 2009); (Chapter-15, Three Stars…)

(২) Reminiscences of Swami Vivekananda; Advaita Ashrama (3rd Edn.1983)

(৩) Calvé, Emma: My Life (D. Appleton and Company, 1922); English Translation by Rosamond Gilder.

(৪) The Dedicated: A Biography of Nivedita; Lizelle Reymond (The John Day Company, New York, 1953).

(৫) স্বামী ব্রহ্মানন্দ স্মৃতিকথা; সংকলক ও সম্পাদক-স্বামী চেতনানন্দ; উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা; (প্রথম প্রকাশ-ডিসেম্বর, ২০০৩), ‘পতিতপাবন স্বামী ব্রহ্মানন্দ’-তারাসুন্দরী দাসী, পৃষ্ঠা- ৪৮৮।

তথ্যসূচী:

(১) গিরিশচন্দ্র ও অন্যান্য প্রসঙ্গ; শ্রীনলিনীরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়; পৃষ্ঠা-৮৬ (দ্রষ্টব্যঃ ‘আমার কথা ও অন্যান্য রচনাঃ বিনোদিনী দাসী, ১৩৭৬ সং, পৃ-৪৭); উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা (প্রথম প্রকাশ-২৬ মে, ২০০১, ষষ্ঠ পুনর্মুদ্রণ-নভেম্বর, ২০১৫)।

(২) স্বামী চেতনানন্দ সঙ্কলিত ‘মাতৃদর্শন’; উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা (প্রথম সংস্করণ-১৯৮৭-৮৮; নবম পুনর্মুদ্রণ- সেপ্টেম্বর-২০০১); পৃষ্ঠা- ৭৪-৭৫

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *