আফরোজা নাজনীন সুমি
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের খুব বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী একটা খাবারের নাম মেজবানী গোস্ত বা মেযযান। চট্রগ্রামের ভাষায় মেযযান মানে মেহমান বা অতিথি। মেজবান পারশিয়ান শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হল হোস্ট। এটি সাধারণত আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষরা আয়োজন করেন। সাধারনত একজন ব্যক্তির মৃত্যুর বার্ষিকী, একটি সন্তানের জন্ম, ঈদে মিলাদুন্নবী, কোনও বিশেষ কৃতিত্ব, বিয়ে, আকিকা বা সন্তানের নামকরন, নতুন ব্যবসা উদ্বোধন বা একটি নতুন বাসভবনে প্রবেশের উদযাপন এর ক্ষেত্রে করা হয়। কোনও ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে মেজবানকে আমন্ত্রণ করে না আমন্ত্রণটি থাকে সবার জন্য উন্মুক্ত। ঐতিহ্য অনুসারে একবার মেজবান সংগঠনের তথ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হলে এতে যোগদান করা সবার একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা হয়ে দাঁড়ায়। মেজবান আয়োজকরা ভোজসভায় যোগদানকারী মানুষের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করেন, কখনও কখনও এই সংখ্যা কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। মেজবান এর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর মেনুটা থাকে খুব সাধারন। এতে থাকবে শুধু সাদা ভাত এবং মাংস। মেজবানে মেজবানী মাংস ছাড়াও থাকে বুটের ডালের সাথে মাংস এবং নেহারী বা পায়া।
সাধারনত গরুর মাংস দিয়ে মেজবান করা হয়। কিন্তু খাসী, মুরগী বা মাছ দিয়েও করা যেতে পারে।
প্রচুর পরিমানের টাটকা মাংস দিয়ে কাঠের চূলায় মেজবান মাংস রান্না করা হয়। রান্না করে সাথে সাথে অতিথিদের পরিবেশন করা হলে তাকে বলে হাজিয়া(ফ্রেশ) মেজবান। আর আগের রাতে রান্না করে সকালে অতিথি আপ্যায়ন করলে তাকে বলে বাই মেজবান।
বাড়ীতে খাওয়ার জন্য অল্প মাংস দিয়ে রান্না করলে আসল মেজবানের স্বাদ আনা খুব কঠিন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি সামাজিক উৎসবের নাম মেজবান। উৎসবের রান্না উৎসবে করলেই আসল স্বাদ পাওয়া যাবে।
উপকরণ:
২ কেজি গরুর মাংস
২ কাপ সরিষা তেল
২ টেবিল চামচ রসুন বাটা
২ টেবিল চামচ আদা বাটা
৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজ বেরেস্তা
১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া
১ টেবিল চামচ ধনে গুঁড়া
২ টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়া
১ চা চামচ জয়ফল জয়ত্রি গুঁড়া
১ টেবিল চামচ গোল মরিচ গুঁড়া
১ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়া
৩ টেবিল চামচ স্পাইস পেস্ট
১/২ কাপ পেঁয়াজ বেরেস্তা
৬/৭ টি এলাচ
২/৩ টুকরা দারচিনি
২/৩ টি তেজপাতা
৩ কাপ পানি
লবণ স্বাদমত
স্পাইস পেস্ট তৈরির প্রণালী
১/২ টেবিল চামচ কাবাব চিনি
১/২ চা চামচ সরিষা
১/২ টেবিল চামচ তিল
১/২ চা চামচ রাঁধুনি
১/২ টেবিল চামচ মৌরি
সবগুলো উপদান বেটে পেস্ট করে নিন।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে মাংসের সাথে রসুনের পেষ্ট, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, আদা বাটা, জয়ফল-জয়ত্রী গুঁড়া, স্পাইস পেস্ট, পেঁয়াজ বাটা, গোল মরিচ গুঁড়া, লবণ, পেঁয়াজ বেরেস্তা, আস্ত এলাচ, দারচিনিও সরিষা তেল দিয়ে খুব ভাল করে মাখিয়ে নিন। এবার মাখানো মাংসে ৩ কাপ পানি দিন। এবার
মাংসটি চুলায় দিয়ে দিন। চুলায় থাকা অবস্থায় আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন।
কিছুক্ষণ নাড়ার পর ঢাকনা দিয়ে ২ ঘন্টা ঢেকে রাখুন। রান্না হয়ে এলে গরম মশলা গুঁড়া দিয়ে দিন।
ব্যস তৈরি হয়ে গেল মেজবান মাংস।
উপকরণ:
গরুর মাংস- সোয়া ১ কেজি
পিয়াজ বেরেস্তা- ২ কাপ
আদা-রসুন বাটা- ২ টেবিল চামচ
কালো গোল মরিচ- ২ চা চামচ
কাবাব চিনি- ৪-৫ টা
রাধুনি- ২ চা চামচ
গরম মসলা- ২ চা চামচ
ধনিয়া গুড়া- ২ চা চামচ
লাল মরিচ গুড়া- ২ চা চামচ
হলুদ গুড়া- ১ চা চামচ
জিরা গুড়া- ১ চা চামচ
টক দই- ১/২ কাপ
শুকনা মরিচ- ৭-৮ টা
কাচা মরিচ- ১০-১২ টা
পেয়াজ ৪ ভাগ করে কাটা ৪-৫ টি
জয়ত্রি গুড়া – ১/২ চা চামচ
জায়ফল গুড়া– ১/২ চা চামচ
পাপরিকা – ২ চা চামচ
আস্ত রসুন এর কোয়া – ৫-৬ টা
সয়াবিন তেল-১/২ কাপ
সরিষার তেল- ১ কাপ
লবন- পরিমান মত।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথম এ গরুর মাংস কে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ধুয়ে যে হাড়িতে রান্না করবেন তাতে রেখে এর
সাথে সরিষার তেল, আস্ত রসুন, শুকনা মরিচ ছাড়া বাকি সব উপাদান দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে চুলায় দিয়ে ঢেকে মাংস সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে, এর মধ্য মাঝে মাঝে কষাতে হবে, মাংস সিদ্ধ হয়ে কালো কালো হয়ে আসলে চুলা থেকে নামাতে হবে।
এবার অন্য একটি কড়াই তে সরিষার তেল গরম করে তাতে পেয়াজ বেরেস্তা করে এর সাথে শুকনা
মরিচ আর রসুন এর কোয়া লাল করে ভেজে রান্না করা গরুর মাংসের মধ্য ঢেলে আরো কমপক্ষে আধ ঘন্টা ভাজা ভাজা করতে হবে।
মাংস কালো হয়ে আর একটু ভাজা ভাজা হয়ে এলে নামানোর আগে অল্প আর একটু রাধুনি গুড়া আর
গরম মসলা গুড়া ছিটিয়ে দিয়ে নামিয়ে ফেলে রুটি, পরটা, ভাত, পোলাও, খিচুড়িরর সাথে গরম গরম
পরিবেশন করুন চিটাগাং এর বিখ্যাত কালা ভুনা মাংস ।
উপকরণ:
ছোলার ডাল ধুয়ে সেদ্ধ করা ৫০ গ্রাম
রান্না করা গরুর মাথার মাংস ৫০ গ্রাম
আদা-রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ
জিরা ১ চা-চামচ
শুকনা মরিচ ৮টি
তেজপাতা ৪টি
কাঁচা মরিচ কয়েকটি
লবণ স্বাদমতো
হলুদ আধা চা-চামচ
চিনি ১ চা-চামচ
ঘি ১ টেবিল চামচ
টমেটো ১ টা
তেল আধা কাপ
গরম মশলার গুঁড়া আধা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
ডাল সেদ্ধ করার সময় লবণ ও হলুদ দিয়ে দিতে হবে। এবার কড়াইতে আধা কাপ তেল দিতে হবে। তেল গরম হয়ে এলে তাতে তেজপাতা ও শুকনা মরিচ ভেজে নিতে হবে। এরপর জিরার সম্বর দিতে হবে। এবার আদা-রসুন বাটা দিয়ে একটু নেড়ে রান্না করা গরুর মাংস দিয়ে তাতে সেদ্ধ ছোলার ডাল দিন। ৮-১০ মিনিট ডাল ফুটিয়ে তাতে টমেটো, কাঁচা মরিচ, গরম মশলার গুঁড়া, চিনি ও ঘি দিয়ে একটি পাত্রে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন